গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে পেনাল্টি মিস, দল জিতলেও হতাশার শেষ ছিল না লিওনেল মেসির। শেষ ষোলোয় আবার আরেক বাধা নিয়ে মাঠে নামতে হয় আর্জেন্টিনা প্রাণভোমরাকে, বিশ্বকাপের নক-আউট পর্বে যে কখনই গোলের দেখা পাননি তিনি। কিন্তু আগের ম্যাচের হতাশা, গোল না পাওয়ার পুরনো রেকর্ড ভুলে জাদুর বাক্স নিয়ে মাঠে নামলেন মেসি। হাজারতম ম্যাচের পুরোটা সময় রং ছড়ানো আর্জেন্টাইন ফুটবল জাদুকর গেরো কাটিয়ে এবার করে নিলেন জালের ঠিকানা, পরে গোল পেলেন হুলিয়ান আলভারেসও। দাপুটে ফুটবলে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠলো আলবিসেলেস্তেরা।
শনিবার কাতারের আহমাদ বিন আলী স্টেডিয়ামে শেষ ষোলোর লড়াইয়ে অস্ট্রেলিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়েছে আর্জেন্টিনা। ম্যাচটি ছিল মেসির ক্যারিয়ারের ১ হাজারতম, এমন ম্যাচে তিনি জাদু ছড়িয়ে গোল করলেন। দল আরেক ধাপ এগিয়ে গেল শিরোপা স্বপ্নের পথে, মেসি ছাড়িয়ে গেলেন বিশ্বকাপে দিয়েগো ম্যারাডোনার ৮ গোলের মাইলফলক। বিশ্বকাপে এখন মেসির গোল ৯টি। আর্জেন্টিনার জার্সিতে তার সামনে আছেন কেবল ১০ গোল করা গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা। সেমি-ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে আগামী ১০ ডিসেম্বর নেদারল্যান্ডসের মুখোমুখি হবে দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।
প্রথমার্ধের গতিময় ফুটবল দেখা যায়নি। কোনো দলই পরিষ্কারভাবে আক্রমণ সাজাতে পারছিল না, বেশিরভাগ সময়ে বল মাঝমাঠে ঘোরাফেরা করেছে। হানা দিলেও প্রতিপক্ষের রক্ষণদূর্গ ভেঙে ডি-বক্স কাঁপাতে পারছিল না কোনো দলই। দাপট দেখিয়ে বল বেশিরভাগ সময়ে বল নিজেদের পায়ে রেখেও আক্রমণ সাজাতে পারছিল না আর্জেন্টিনা। এর মধ্যেই অবশ্য আসল কাজটি করে নেয় আলবিসেলেস্তেরা। গোলমুখে তাদের নেওয়া ২টি শটের একটি থাকে লক্ষ্যে, সেটাই জড়ায় জালে।
গোলের আগে আর্জেন্টিনার উল্লেখযোগ্য আক্রমণ ছিল দশম মিনিটে। এ সময় এনসো ফার্নান্দেজ থ্রু পাস দেন, বলটি নিয়ন্ত্রণে নিতে পারলে গোলের দেখা পেলেও পেতে পারতেন হুলিয়ান আলভারেজ। কিন্তু বল নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি ম্যানচেস্টার সিটির এই স্ট্রাইকার। এরপর কয়েক মিনিট দুই দলই মাঝমাঠে বল নিয়ে ঘোরাফেরা করে। ১৭তম মিনিটে বাঁ প্রান্ত দিয়ে গিয়ে ডি-বক্সের বেশ বাইরে থেকে পাপু গোমেজের নেওয়া থেকে জোরালো শট বারপোস্টের অনেক উপর দিয়ে চলে যায়।
২৯তম মিনিটে আক্রমণ করে অস্ট্রেলিয়া। কর্নার থেকে উড়ে আসা বলে লাফিয়ে হেড নেন হ্যারি সুটার। তবে ছোট ডি-বক্স ক্রিশ্চিয়ান রোমেরা ব্লক করলে বেঁচে যায় আর্জেন্টিনা। ৩৫তম মিনিটে কাঙ্খিত গোলের দেখা পেয়ে যায় আর্জেন্টিনা। ডান প্রান্ত থেকে আলেক্সিস ম্যাক আলিস্টারকে বল দিয়ে ডি-বক্স ঢুকে পড়েন মেসি। আলিস্টার বল বাড়ান ওতামেন্দিকে। এই ডিফেন্ডার আলতো টোকায় ডি-বক্সে বল দেন মেসিকে। বাঁ পায়ের প্লেসিং শটে বল জালে জড়ান আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে এটাই তার প্রথম গোল।
দ্রুত সময়ের মধ্যে আরও এগিয়ে যাওয়ার পণ নিয়ে মাঠে নামে আর্জেন্টিনা। ৫০ তম মিনিটে মেসির বাড়ানো ত্রু পাস থেকে বল পেয়ে এগিয়ে গিয়ে ক্রস করেন ডি পল। তার শট পরিষ্কার করে অস্ট্রেলিয়া, তবে পুরোপুরি পরিষ্কার করেতে পারেনি। বল পান ম্যাক আলিস্টার। তিনি বলে দেন মেসিকে। আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড শরীরের ভারসাম্য ঠিকভাবে রাখতে পারেননি, ওই অবস্থাতেই শট নেন। সেটাও অজিদের এক ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে গোলরক্ষকের হাতে জমা পড়ে।
৫২তম মিনিটে ওতামেন্দির ভুলেলে গোল হজম করার অবস্থা হয়ে গিয়েছিল আর্জেন্টিনার। ডি-বক্সের বাইরে থেকে গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেসজে ব্যাকপাস দেন এই ডিফেন্ডার, কিন্তু বাঁ পাশ থেকে অস্ট্রেলিয়ার মিচেল ডিউক প্রায় বল পেয়ে গিয়েছিলেন। শেষ মুহূর্তে পরিষ্কার করে দলকে বিপদমুক্ত করেন আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক।
অস্ট্রেলিয়ার একই রকমের ভুলে ৫৭তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে আর্জেন্টিনার। ডান প্রান্ত থেকে অস্ট্রেলিয়ার গোলরক্ষক ম্যাট রায়ানকে ব্যাক পাস দেনি সেন্টার ব্যাক কাই রোলেস। বল দখলে এগিয়ে যান ডি পল। তাকে ফাঁকি দিতে বলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন রায়ান। এই সুযোগে পেছন থেকে গিয়ে বল কেড়ে নিয়ে কোণাকোণি শটে লক্ষ্যভেদ করেন আলভারেস। বিশ্বকাপে এটা তার দ্বিতীয় গোল, আগের ম্যাচে পোল্যান্ডের বিপক্ষেও জালের ঠিকানা পান তিনি।
৬৫তম মিনিটে দেখা যায় মেসি ঝলক, যেন তরুণ দুর্বার মেসি। মাঝ মাঠ থেকে বল নিয়ে অস্ট্রেলিয়ান তিন খেলোয়াড়কে কাটিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন আর্জেন্টাইন জাদুকর। তবে শেষ মুহূর্তে অস্ট্রেলিয়ার রক্ষণভাগের খেলোয়াড়ের বাধায় শট নিতে পারেননি তিনি। পরের মিনিটে মেসির পাস থেকে আকুনার ক্রস, কিন্তু বলে পা ছোঁয়াতে পারেননি আলভারেজ। ৬৭তম মিনিটে ডি পলের পাস থেকে বল পেয়ে মেসির নেওয়া শট বারপোস্টের উপর দিয়ে চলে যায়।