কাতার বিশ্বকাপে আরেকটি এশিয়ান রূপকথা লিখল ইরান।
ম্যাচের শেষ তিন মিনিটে দুই গোল করে ওয়েলসকে হারিয়ে নক-আউট পর্বে ওঠার
স্বপ্ন বেশ ভালোভাবেই বাঁচিয়ে রাখল তারা।
প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের
বিপক্ষে ৬-২ গোলে বিধ্বস্ত হওয়ার পর এই ম্যাচে হারলেই প্রথম দল হিসেবে
কাতার বিশ্বকাপ থেকে বিদায়ঘণ্টা বেজে যেতো ইরানের। কিন্তু ওয়েলসকে হারিয়ে
প্রথমবারের মতো নক-আউট রাউন্ডে যাওয়ার পথ সুগম করলো পারস্যের দেশটি।
আরব্য
রজনী, এশিয়ার জাগরণের বিশ্বকাপে এবার পারস্যের রূপকথা লিখল ইরান। এর আগে
বিশ্বকাপে ৫ বার খেললেও কখনোই গ্রুপ পর্বের বাধা পার হতে পারেনি
ইরান। গ্যারেথ বেলের ওয়েলসকে ২-০ গোলে হারিয়ে কাতারে সেই সম্ভাবনা জাগিয়ে
তুলেছে বিশ্বকাপে পারস্যের একমাত্র প্রতিনিধিরা। আহমাদ বিন আলি স্টেডিয়ামে
এবারের বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা ম্যাচ উপহার দিয়েছে দুই দল। হাড্ডাহাড্ডি
লড়াইয়ের ম্যাচে ইরান জিতলেও ওয়েলসও কম যায়নি।
প্রথম ম্যাচে
আমেরিকার বিপক্ষে ড্র করায় ওয়েলসের ঝুলিতে ছিল এক পয়েন্ট, ইংল্যান্ডের
বিপক্ষে ৬-২ গোলে উড়ে যাওয়া ইরান এই ম্যাচ হারলেই প্রথম দল হিসেবে বিদায়
নিতো কাতার থেকে। এক অর্থে এটা বাঁচা-মরার লড়াই ছিল মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির।
সেই
লড়াইয়ের প্রথমার্ধটা ছিল টানটান উত্তেজনায় ভরপুর। বল দখলের ক্ষেত্রে ওয়েলস
এগিয়ে থাকলেও তাদের আক্রমণগুলো নষ্ট হচ্ছিল বেল-উইলসনদের বাজে ফিনিশিংয়ের
জন্য। ইরানের একটি গোল বাতিল হয় অফসাইডের জন্য। ইরানিয়ান মেসি খ্যাত সর্দার
আজমুন বেশ সমস্যা সৃষ্টি করেছেন ওয়েলস ডিফেন্ডারদের জন্য।
দ্বিতীয়ার্ধে
দুই দলই জয়ের জন্য মরিয়া হয়ে খেলতে থাকে। তবে এই অর্ধে ইরানের দাপট ছিল
বেশি। গোলমুখী প্রচেষ্টায় তারা ওয়েলসকে টেক্কা দিতে থাকে। তবে এতো আক্রমণের
পরও গোলের দেখা পাচ্ছিল না পারস্যের দেশটি। ৮৬ মিনিটে বক্সের বাইরে ইরানের
মেহদি তারেমিকে ফাউল করে সরাসরি লাল কার্ড দেখেন ওয়েলসের গোলরক্ষক হেনেসি,
যেটি কাতার বিশ্বকাপের প্রথম লাল কার্ড।
১০ জনের দলে পরিণত হওয়া
ওয়েলসকে এরপর চেপে ধরে ইরান। ম্যাচের নির্ধারিত ৯০ মিনিটের সঙ্গে অতিরিক্ত
৯ মিনিট যোগ করেন অফিশিয়ালরা। ম্যাচের ৯৮ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে চেসমির
দুর্দান্ত শট ওয়েলসের বল জালে জড়ালে ১-০ গোলে এগিয়ে যায় ইরান। ম্যাচ জয়ের
জন্য এটিই যথেষ্ট মনে হচ্ছিল, কিন্তু শেষ বাঁশি বাজার আগে আবারও গোল করেন
রাজাইয়েন।
এই জয়ের ফলে 'বি' গ্রুপের পয়েন্ট টেবিলে দ্বিতীয় স্থানে
উঠে এলো ইরান। এক পয়েন্ট নিয়ে পরের রাউন্ডে যাওয়ার আশা ক্ষীণ হয়ে গেল
টেবিলের তলানিতে থাকা ওয়েলসের।
ম্যাচে বল দখলের লড়াইয়ে এগিয়ে ছিল
ওয়েলস, কিন্তু ৬২% বল দখলে রেখেও ম্যাচে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে
পারেনি তারা। গোলের প্রচেষ্টায় ইরানের কাছে পাত্তা পায়নি ওয়েলস, ইরানের ২১
শটের বিপরীতে ওয়েলসের শট ছিল ১০ টি।
নিজেদের শেষ গ্রুপ ম্যাচে
ইরানের প্রতিপক্ষ আমেরিকা, ড্র করলেও পরের রাউন্ডে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকছে
ইরানের সামনে। অন্যদিকে ওয়েলস মুখোমুখি হবে ইংল্যান্ডের, যে ম্যাচে জেতা
ছাড়া কোনো পথ খোলা নেই রব পেজের দলের সামনে।