English

আখাউড়ায় স্বর্ণ থেকে ফ্রিজের মাছ-মাংসও নিরাপদ নয়

আখাউড়ায় স্বর্ণ থেকে ফ্রিজের মাছ-মাংসও নিরাপদ নয়
সারাদেশ চট্টগ্রাম

আশীষ সাহা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি:

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার চুরির ঘটনা নিত্যদিনের। নদুপুরে চুরি হয়েছে ফ্রিজের মাছ ও মাংস। দোকানের ১৩ তালা ভেঙ্গে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ৪৪ ভরি স্বর্ণালংকার। নিরাপদ নয় পথও। প্রতারণা করে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে টাকা-পয়সা। স্টেশন ও ট্রেনে ছিনতাই হচ্ছে মোবাইল ফোন। চুরির তালিকায় আছে গরু। এ হাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার চুরির নিত্যদিনের ঘটনা। বাড়ি থেকে দোকানপাট সর্বত্রই চুরির হিড়িক। রেহাই পাননি সাংবাদিক। আতঙ্ক পুরো উপজেলাজুড়ে। দিনেও ঘরের দরজা খোলা রাখতে ভয়। মুহুর্তের জন্য কেউ ঘর খালি রাখতে চান না।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে ও সরজমিনে ঘুরে জানা গেছে, একটি চক্র বেশ সক্রিয় উপজেলার সর্বত্র। বিশেষ করে বাড়ি ভাড়ার কথা বলে তারা হানা দিচ্ছে বাড়ি বাড়ি। এর বাইরেও গ্রিল ও তালা কেটে চুরির ঘটনা ঘটেছে। চক্রের বাইরে স্থানীয় চোররাও বেশ সক্রিয় মাস দু’য়েক ধরে। গত দুই মাসে উপজেলায় অন্তত ৫০টির বেশি চুরির ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব ঘটনার মধ্যে মাত্র দু’টির বিষয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে।

গত ২৯ ডিসেম্বর বাড়ি ভাড়ার কথা বলে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা রওনক জাহানের পৌর এলাকার রাধানগরের বাসায় দিনের বেলায় দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা বেশ আলোচনার জন্ম দেয়। এ ঘটনায় অবশ্য কয়েক ভরি স্বর্ণ উদ্ধার করে পুলিশ। সনাক্ত করেছে চুরির ঘটনায় জড়িত নারীসহ সংশ্লিষ্টদের।

চুরির ঘটনা ঘটে কালের কণ্ঠের সাংবাদিক বিশ্বজিৎ পাল বাবুর রাধানগরের বাড়িতে। গত ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে এ ঘটনায় গ্রিল কেটে ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, ক্যামেরাসহ প্রায় আড়াই লাখ টাকার মালামাল নিয়ে যাওয়া হয়। এ ঘটনার সপ্তাহ পেরুলেও কিছুই উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশ সন্দেহভাজন হিসেবে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করলেও কোনো মালামাল উদ্ধার করতে পারেনি।

এ ঘটনার দু’দন পরই দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটে পৌর এলাকার সড়ক বাজারের মনোরমা স্বর্ণ শিল্পালয়ে। ওই দোকান থেকে প্রায় ৪৪ ভরি স্বর্ণালংকার চুরি হয় বলে থানায় দায়ের করা অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। ১৩টি তালা কেটে এ চুরির ঘটনার পর ব্যবসায়িদের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গন থেকে মোটরসাইকেল চুরি হয় সাংবাদিক এম এ জলিলের। রাধানগর এলাকায় প্রাইভেট পড়তে এসে নতুন একটি বাইসাইকেল খোয়ান শিক্ষার্থী মো. শাকিল। প্রতিনিয়তই চুরি হচ্ছে কৃষকের গরুসহ অন্যান্য জিনিস। চলতি সপ্তাহে আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশন থেকে ভারতীয় নাগরিক স্বপন পালের মোবাইল ফোন সেট চুরি হয়।

চোরের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না ফ্রিজে থাকা মাছ ও মাংস। মাস দেড়েক আগে উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সাধারন সম্পাদক আবুল মুনসুর মিশনের ভাই সোহাগ হাজারীর ঘরে দিনের বেলাতেই ঢুকে ফ্রিজ থেকে মাছ ও মাংস নিয়ে যায় চোর। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার পৌর এলাকার দেবগ্রামে শিপন দেওয়ানে বাড়ি থেকে পাঁচটি কবুতর চুরি হয়, যা ওই বাড়িতে প্রথম চুরির ঘটনা।

একের পর এক ঘটনায়ও পুলিশের তেমন কোনো তৎপরতা নেই বলে অভিযোগ রয়েছে। পুলিশের এক কর্মকর্তা বরং এসব বিষয়ে ভুক্তভোগীদেরকে দায়ী করে নিজের দায় এড়াতে চান। চুরি হওয়া স্বর্ণের দোকানে রাত দেড়টার দিকে ঢুকে পুলিশের লকার খোলার চেষ্টার বিষয়টিকেও ভালোভাবে দেখছেন না সাধারণ মানুষ।

মনোরমা শিল্পালয়ে মালিক অশিষ বিশ্বাস জানান, তার দোকান থেকে ৪৪ ভরি স্বর্ণ খোয়া গেছে। দিন রাত জনসমাগম থাকা এলাকায় তার দোকান হওয়া সত্বেও এ ধরণের চুরিতে তিনি বেশ হতবাক। এ বিষয়ে তিনি থানায় মামলা দায়ের করেছেন।

স্বর্ণ ব্যবসায়িরা জানান, ঘটনার পর তারা কালো পতাকা উড়ানো ও দোকান বন্ধ রাখার মতো কর্মসূচি দিতে চেয়েছিলেন। তবে একজন জনপ্রতিনিধির অনুরোধে সে আন্দোলন থেকে সরে এসেছেন। কিন্তু এখনও কোনো মালামাল উদ্ধার না হওয়ার তারা আতঙ্কে আছেন।

আখাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আসাদুল ইসলাম জানান, ‘চুরি ঘটনা এখন অনেক নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। একটি ঘটনায় চোরাই স্বর্ণও উদ্ধার করা হয়েছে। পরবর্তী ঘটনার মালামাল উদ্ধারেও পুলিশের তৎপরতা অব্যাহত আছে। সাংবাদিকদের বাড়িতে চুরির ঘটনায় ছয়জন, স্বর্ণের দোকানে চুরির ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’