শেখ কামরুল হাসান
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি শোনার পর বিষয়টির গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনুধাবণ করেন। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি শুধু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সীমাবদ্ধ না রেখে জরুরী ভিত্তিতে আন্তঃমন্ত্রণালয়কে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন এবং অনেক প্রকার আনুষ্ঠানিকতা উপেক্ষা করে যতদ্রুত সম্ভব প্রস্তাবটিকে প্যারিসের ইউনেস্কোর সদর দপ্তরে পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ঐতিহাসিক প্রস্তাবটি ৯ই সেপ্টেম্বর ১৯৯৯ সালে ডেডলাইনের একদিন আগে ইউনেস্কোর সদর দপ্তরে এসে পৌছে। এবার শুরু হয়ে গেলো সমর্থন আদায়ের জন্য বাংলাদেশের কর্তাব্যক্তি ও কূটনীতিকদের টানা কয়েক দিনের তৎপরতা।
প্যারিসে বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী, ইউনেস্কো মহাসচিবের সিনিয়র এডভাইজার তোজাম্মেল হক, প্যারিসে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর ইসতিয়াক চৌধুরী এবং বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী সাদেক হোসেন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। দুই বন্ধুর মিলিত প্রচেষ্ঠা এবার রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে রুপান্তরিত হলো। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের এই প্রচেষ্টার ফলে ২১শে ফেব্রুয়ারী ভাষা দিবসকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতিদানের প্রস্তাবের পক্ষে ইউনেস্কোর ২৯টি সদস্য রাষ্ট্র সমর্থন করে এবং স্বাক্ষর প্রদান করেন।
শুনলে অবাক হবেন যে, এই ২৯ টি রাষ্ট্রের মধ্যে পাকিস্তানও ছিল। সেই পাকিস্তান যেই পাকিস্তানকে নিয়ে এত ঘটনা। যারা উর্দুকে রাষ্ট্র ভাষা করার জন্য ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালিয়ে বর্বরতা ও নির্মমতার চরম বহি:প্রকাশ ঘটিয়েছিলেন যার ফলস্বরূপ ২১শে ফেব্রুয়ারীরমত ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস রচিত হয়।
১৯৯৯ সালের ২৬শে অক্টোবর থেকে ১৭ই নভেম্বর ফ্রান্সের প্যারিসে অনুষ্ঠিত হয় ইউনেস্কোর ৩০ তম দ্বিবার্ষিক সাধারণ সম্মেলন। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সাদেক হোসেন, শিক্ষামন্ত্রী গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ইউনেস্কোর সেই সম্মেলনে যোগদান করেন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা প্রস্তাবটি বাংলাদেশ ন্যাশনাল কমিশন ফর ইউনেস্কোর সচিব প্রফেসর কফিলউদ্দিন আহমদ আনুষ্ঠানিক ভাবে অধিবেশনে উপস্থাপন করেন। প্রস্তাবটি উপস্থাপিত হয় ১৭ই নভেম্বর, ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো অধিবেশনের শেষ দিনে। ইউনেস্কোর ১৮৮টি সদস্য রাষ্ট্রের কেউই এই প্রস্তাবে বিরোধিতা না করায় সর্বসম্মতিক্রমে সেই দিনিই প্রস্তাবটি অনুমোদিত হয়। এভাবেই একটি দেশের অভ্যন্তরীণ ভাষা আন্দোলন ও ভাষা দিবস আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে রুপান্তরিত হয়।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
রেফারেন্স:
• ড. মোহাম্মদ হাননান, হাজার বছরের বাংলাদেশ, ৩য় সংস্করণ, মে-২০০৫
• আমিনুল ইসলাম মাওলা, ভাষা আন্দোলনের ৫০ বছর, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস প্রস্তাবকের সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী, ভ্যাঙ্কুভার, কানাডা, জানুয়ারী ১০, ২০০২ ।
• A Brief History On International Mother Language Day ( IMLD)