English

পিবজা'র নির্বাচন : চিন্তার দৈনতা নাকি মোহ?

পিবজা'র নির্বাচন : চিন্তার দৈনতা নাকি মোহ?
মতামত

বাংলাদেশ প্রেস ইন্সটিটিউট জার্নালিজম এলামনাই অ্যাসোসিয়েশন(পিবজা)এর দ্বিবার্ষিক নির্বাচনকে ঘিরে শুরু হয়েছে উন্মাদনা। চলতি বছরের ২মে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার কথা রয়েছে। ঘাতক ভাইরাস কোভিড-১৯ ভয়াবহতায় থমকে গিয়েছিল এর কার্যক্রম। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বাংলাদেশের একমাত্র সরকারি ইনস্টিটিউট পিআইবি। যেখানে সাংবাদিকদের উচ্চতর প্রশিক্ষণ ও ডিগ্রী প্রদান করা হয়। এই প্রতিষ্ঠান থেকে উত্তীর্ণ  ডিগ্রিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সংগঠন পিবজা। এটি একটি অলাভজনক সাংবাদিক সহ বহুমুখী পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিত্বদের নিয়ে গড়ে ওঠা এলামনাই এসোসিয়েশন। সংগঠনটি দ্বিতীয় কমিটির নির্বাচনকে ঘিরে কতিপয় সদস্যদের অন্যয্য ও অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ এবং ও চিন্তার দৈনতায় সংগঠনটির কার্যক্রম বার বার ব্যাহত হয়েছে।

পিপজার সাবেক সহ-সভাপতি হিসেবে আমার আন্তরিক প্রার্থনা সবাইকে একটি প্লাটফর্মে দেখা। নেতৃত্ব কোন চিরস্থায়ী বিষয় নয়। কে সভাপতি, কে সাধারণ সম্পাদক বা অন্য কোন পদে আসবেন সেটা বড় বিষয় নয়। আমি খোলা মনেই বলেছিলাম,যিনি সময় দিতে পারবেন যিনি সংগঠনকে ভালবাসতে পারবেন মনে প্রাণে তাদের এগিয়ে আসা উচিত। একই পদে একাধিক ব্যক্তি হলে কম্প্রোমাইজ করা উচিত। এ বছর কাউকে ছাড় দিয়ে আগামী বছর  আগ্রহী অন্যজনকে সংগঠনকে সেবা করার সুযোগ দেওয়া উচিত। আগ্রহী সেবকদের আমরা সাধুবাদ জানাই, শ্রদ্ধা জানাই। সেবা করতে এসে যদি অন্যকে দুঃখ দিয়ে সেবক হতে আসেন সেটা তো সেবকের সংজ্ঞার পরিপন্থী কাজ হয়ে যায়। আমাদের মত এজাতীয় অলাভজনক সংগঠনে প্রথাগত নির্বাচনের বিরুদ্ধে আমার অবস্থান বরাবর এক অপরিবর্তনীয়। নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন, প্রথাগত নির্বাচনী চর্চা বন্ধুত্বকে কিভাবে আঘাত করেছে? বন্ধুর বিরুদ্ধে বন্ধুর অবস্থান তৈরি করেছে। মুখে যতই বন্ধু বলুক তার কাঙ্খিত পদে জয়ের জন্য যা প্রয়োজন তাই করেছে। এই সামান্য টুকু মোহ লোভ আমরা কি সামলে নিতে পারি না? সামলাতে না পারলেও একটি সেশন এর জন্য অপেক্ষা করা যায় না? তাহলে কিসের বন্ধুত্ব? এটি 'এসো মিলি প্রাণের টানে' যে স্লোগানটি আমাদের ছিল তার সম্পূর্ণ পরিপন্থী।

ওখানে তুহিন ভাই মিজান নামে যিনি পরিচিত মমিনুল্লাহ ভাই,মেজবা ভাই, নবীন ভাইসহ কজন মিলে দুটি সফল অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেছে প্রথমটিতে অর্থাৎ পিকনিক সংখ্যায় কম হলেও ইফতারে অংশগ্রহণকারী সংখ্যা ছিল  ঈর্ষণীয়। সেখানে কোনো সভাপতি সাধারণ সম্পাদক ছিল না। ছিল না কোন পদ পদবী কিন্তু একটি সফল অনুষ্ঠান হয়েছে একটি সফল সমাগম হয়েছে বন্ধুদের। যেটাই আমাদের এই প্লাটফর্মের মূল লক্ষ্য।

সেখানে কারো নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন ছিল না। মাত্র ৫-৬ জন বন্ধু এতগুলো সহপাঠী বন্ধুদের অংশগ্রহণ কে নিশ্চিত করেছে সেটা কি প্রমাণ করে না নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা কতটুকু রয়েছে? নিঃসন্দেহে, নিঃসংকোচে একটি কমিটি হতে পারত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। যেমনটি বেশ কয়েকটি পদে আমরা দেখতে পেয়েছি। তাদের সকলকেই আমরা সাধুবাদ জানাই। অভিনন্দন জানাই। ৪০০ জন লোকের মধ্যে কি কেউ ছিল না ও ওই পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার? অবশ্যই ছিল আমি ধন্যবাদ দেই ৩১ টি পদের বাইরে থাকা সম্মানিত সদস্যদের। যাদের কাছ থেকে আমাদের অনেক কিছু শিক্ষনীয় রয়েছে। আমরা অনেক আইনের কথা বলছি ।আমরা অনেক নিয়ম নীতির কথা বলছি। ভালো কথা ।সভ্য সমাজের জন্য নিয়ম নীতি আইন অবশ্যই প্রয়োজন। এটাও জানা প্রয়োজন যে,সভ্যতার প্রয়োজনে বা মানুষকে সভ্যতার জালে আবদ্ধ করার প্রয়োজনে আইনের প্রয়োজন পড়ে। মানুষের প্রয়োজনে আইন প্রণীত হয়। আইনের প্রয়োজনে নয়। আমাদের এখানে সবাই শিক্ষা দীক্ষায় অন্তত এলিট শ্রেণীর সদস্য। এখানে কেউ অন্যায় করবে ,কেউ দুর্নীতি করবে এই বিশ্বাস করাটাই পাপ বলে আমার মনে হয়। এখানে অন্যায় বা দুর্নীতি করে পার পাওয়া যাবে না এটা সকলেই জানে।

আমরা আইনের প্রয়োজনে আইন অনুসরণ করতে গিয়ে মূল বিষয়টি থেকেই সরে পড়েছি। আইনের প্রয়োজনীয় বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়ে যাচ্ছি। যেখানে আমরা এখনো সংগঠনটিকে একটি শক্ত কাঠামোতেই দাঁড় করাতে পারিনি সেখানে আলোচিত বিষয় ও মন্তব্যগুলো দামী হলেও অপ্রাসঙ্গিক।

আমাদের এখানে সবাই উচ্চ শিক্ষিত ও চিন্তা চেতনায় সম্ভ্রান্ত। আমার এটিই বিশ্বাস ছিল। কিছু বন্ধুদের অপ্রাসঙ্গিক পাণ্ডিত্য আমার অন্তরে অবিশ্বাসের দানা বাঁধিয়েছে । যা সত্যিই অনাকাঙ্খিত।

শুরু থেকে একটি কথাই বলছিলাম, যে কমিটমেন্ট করবে যে,আমি সংগঠনের জন্য এই কাজটি করব তাকে সেই সুযোগটি দিতে । আমরা ছয় মাস অপেক্ষা করতে পারি, এক বছর অপেক্ষা করতে পারি। যদি তার কমিটমেন্ট রক্ষা করতে এসে ব্যর্থ হয় তাহলে তাকে সবাই মিলে সরিয়ে দিতে পারি আবার নতুন আরেকজনকে আহবান করতে পারি ।কিন্তু এখানে আমার সভাপতি হতেই হবে। এখানে আমার সাধারণ সম্পাদক হতেই হবে এমন প্রবণতাটি আমাকে ক্ষুব্ধ করেছে। আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ করেছে। আমার কাছে বারবার মনে হয়েছে 'এসো মিলি প্রাণের টানে' স্লোগানটির সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে।

আমি আশাবাদী সিংহভাগ সদস্যের মধ্যে সেই প্রবণতাটা নেই। তারা চায় যারা ভালো নেতৃত্ব দিতে পারে তারা এগিয়ে আসুক ।যেই আসুক আমাদের বন্ধুরাই তো আসবে। তাদের এই উদারতার প্রতি আমরা সম্মান প্রদর্শন করতে পারিনি।

আমাদের পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের অভাব। বিগত কয়েক দিনের কমেন্টস গুলোতে শ্রদ্ধাবোধের অভাবের ছাপ সুস্পষ্ট পরিলক্ষিত। কুটিল চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। শিক্ষা আমাদেরকে সব সময় ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দান করে। আমরা কোন শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছি সেটি আজ বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে? শিক্ষা হলো মানুষের আচরণের কাঙ্খিত ইতিবাচক পরিবর্তন। একজন শিক্ষিত মানুষের কাছে কখনই নেতিবাচক চিন্তা ও আচরণ প্রত্যাশা করা যায় না।

আমাদের এই নেতিবাচক প্রবণতা থেকে  বেরিয়ে আসতে হবে ।আমরা এই সংগঠনটিকে একটি আদর্শ সংগঠনে পরিণত করা স্বপ্ন দেখেছিলাম ।নিজের খেয়ে বনে মোষ তাড়ানো কয়েকজন সদস্যের উজার করা নিঃস্বার্থ ভাবে কাজ করার উৎসাহ দেখে বিশ্বাস আরো প্রবলতর হয়েছে। অনেক স্বপ্ন ছিল ।সেই স্বপ্নগুলোকে বারবার আঘাত করা হয়েছে‌ এত জ্ঞানীগুণীর সমাহারে এটা মোটেই কাঙ্ক্ষিত ছিল না।

আমরা কি প্রচলিত  নির্বাচনী ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবো? আমাদের এটা নিশ্চয়ই সবার জানা। গণতন্ত্র হলো নিকৃষ্টতম উত্তম পন্থা। এখন পর্যন্ত সেটি প্রচলিত আছে। এটি কিন্তু ইউনিভার্সাল পদ্ধতি না। বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে যেখানে হাজার হাজার শ্রেণী, পেশা, মত, ধর্ম ও বর্ণের মানুষের আধিক্য রয়েছে সেখানেই কেবল প্রচলিত ধারার নির্বাচন প্রয়োজন হয়।

আমাদের এই অলাভজনক সংগঠনটির ক্ষেত্রে এটি হবার কথা ছিল না। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সে নিকৃষ্টতম  উত্তম পন্থাটি আমাদেরকে অবলম্বন করতে হয়েছে। নির্বাচন ।কঠিন নির্বাচন ।লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয়ের নির্বাচন। ২০০ টাকা চাঁদা উঠাতে গিয়ে ঘাম ঝরেছে। লক্ষণীয় যে, নির্বাচনে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে লক্ষ লক্ষ টাকা সংগ্রহ করতে কোন সময়,কষ্ট কিংবা কসরত করতে হয়নি নির্বাচন কমিশনকে। বিষয়টি ইতিবাচক হলেও আমাদের একটি মানসিকতার পরিচয় কিন্তু ফুটে উঠেছে। সেটি গবেষণার একটি উত্তম আঁধার হতে পারে।

আমি আত্ম সমালোচনা করছি । কাউকে কষ্ট দেয়ার জন্য না । আমাকে ক্ষমা করবেন। শুধুমাত্র নির্বাচনী উৎসব হওয়ার জন্য যতটুকু আচরণ করা প্রয়োজন এর বাইরে কোন প্রকার কুটচাল দেখতে এবং চর্চা করতে আমি অন্তত প্রস্তুত কিংবা অভ্যস্ত নই। আমি এটা চাই না। যেটা আমাদের সিংহভাগ সদস্যরাও চায় না ।আমি তাদেরই সাথে। যদি চ্যালেঞ্জ করেন আমাকে বলুন। আমি আমার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেব। তবুও আমি চাই একটি সুন্দর কমিটি হোক। একটি কমিটি হোক সুযোগ্য আলোকিত মানুষদেরকে নিয়ে। যাদেরকে নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারি। যাদেরকে নিয়ে আমাদের সংগঠন গর্ব করতে পারে ।পরস্পরের আলোয় আলোকিত হব আমরা। আলোকিত হবে সমাজ। আলোকিত হবে আমাদের পরিবারের প্রতিটি সদস্য । আমাদের সংগঠনটি একটি আদর্শ সংগঠনের দৃষ্টান্ত হবে অন্য সংগঠনের সামনে।

আমরা এই মানষিকতা যদি এগিয়ে না আসি তাহলে নোংরামি বন্ধ হবে না। সংগঠনের মূল উদ্দেশ্য ও আদর্শ ব্যাহত হবে। যদি তাই হয় সময় নষ্ট করে এখানে থাকার কোন প্রয়োজনীয়তাই আমরা অনুভব করি না। এই অনুভূতি বিনষ্ট হয়েছিল বিধায় নিকট অতীতে আমরা অসম্মানিত হয়েছি। আমরা বিতাড়িত হয়েছি। আমরা পাঁচ বছর পিছিয়েছি। পদ নিয়ে এত আকাঙ্ক্ষা কেন? বিগত সভা গুলোতে  কোরাম সংকট দেখেছি। কারণ আমাদের কোন প্রতিশ্রুতি ছিল না দায়িত্বের প্রতি। এবার যারা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে ওয়াদা করছে ,কেবল তাদেরকেই আমরা মনোনয়ন দিতে পারি। সেটা সিলেকশন পদ্ধতিতেও হতে  পারত। যেটা এখন আর সম্ভব নয়। আমরা একটি কথিত গণতান্ত্রিক পন্থায় একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে যাচ্ছি। সেটি হোক নির্বাচনী ধারায়।

এখানে লক্ষণীয় যারা নির্বাচন পরিচালনা করছেন, যারা এতগুলো সহপাঠী বন্ধুদের সমাগম করেছেন ,লক্ষ লক্ষ সেকেন্ড ব্যয় করেছেন, ফোন করে যোগাযোগ করেছেন, তাদের তাদের দিকে একবার তাকাই ।কি স্বার্থ ছিল তাদের ?এখন কি স্বার্থ আছে তাদের? প্রাইভেট অফিসে চাকরি করে দিনরাত এই নির্বাচন কাজ করে যাচ্ছেন? আমরা কি পারতাম? এই কজন কিন্তু  পেরেছে! তাদের কে এখনই ভুল শুদ্ধের দাঁড়িপাল্লায় মাপার কোন প্রয়োজনীয়তা অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে? যদি আমাদের সংগঠনের মূল লক্ষ্যটি আমরা মনে রাখি যে, আমরা ৪০০ জন একত্রিত হয়েছি এটাই সবচেয়ে বড় সফলতা ‌। এই ব্যক্তিরা কিন্তু কোন পদ পদবীর আশায় কিছু করেনি ‌আশা করছেও না। একটাই আশা সকলকে একত্রিত করা। ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করা।আমাদের এখানে সবাই যোগ্য সভাপতি হওয়ার। সেক্রেটারি হওয়ার । একই সময়ে তাই বলে সবাই কি সভাপতি সেক্রেটারি হবার সুযোগ আছে? প্রয়োজন ধৈর্য আর বন্ধুর জন্য ত্যাগের মানসিকতা। সম্মান সম্মান বয়ে আনে ।ভালোবাসা ভালোবাসা বাড়ায়।আসুন দল মত নির্বিশেষে একটি ছাতার নিচে নিজেকে সমর্পণ করি সকল মোহ ত্যাগ করে! কোভিড এর কথা নিশ্চয়ই মনে আছে? সেখান থেকে অন্তত শিক্ষা নেই আমরা বেঁচে আছি। এটাই সবচেয়ে বড় বিষয় সবচেয়ে বড় সফলতা। এটি আমার  ব্যক্তিগত ভাবনা। আপনাদের সঙ্গে আমার অনুভূতিগুলো শেয়ার করলাম মাত্র। বেয়াদবি ,ভুলত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন।



লেখক : ড. দিপু সিদ্দিকী, সহ-সভাপতি পদপ্রার্থী।