উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে সিলেটসহ সারাদেশের বন্যা পরিস্থিতি চরম অবনতি হয়েছে। উজানের ঢল, টানা বৃষ্টিতে বন্যার স্রোতে ভেসে গেছে ঘর-বাড়ি, আসবাবপত্র, গবাদিপশু৷ বাড়ছে বন্যার পানি, সেইসঙ্গে বাড়ছে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট৷ সিলেটে ১৩টি উপজেলার ৮৫টি ইউনিয়ন প্লাবিত হওয়ায় এলাকাবাসীরা দুর্বিসহ দিন পার করছেন৷
হঠাৎ আসা পাহাড়ি ঢলে সীমান্তবর্তী সিলেটের উপজেলাগুলো বেশি বন্যা কবলিত হয়েছে৷ সীমান্ত উপজেলা কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, জকিগঞ্জ, কানাইঘাটের বাসিন্দারা দুর্বিষহ দিন পার করছেন৷ সড়কে বন্যার পানি থাকায় মানুষের যাতায়াত বন্ধ রয়েছে। দিনে এবং রাতে সমান তালে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় অজানা আতঙ্কে সিলেটের বিস্তীর্ণ এলাকার লোকজন। অনেকে বন্যা আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। এদিকে বন্যার পানির কারণে গ্রাম এলাকায় বিশুদ্ধ খাওয়ার পানির সরবরাহ ও স্যানিটেশনের অসুবিধা দেখা দিয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, চলতি জুনের পুরো মাস বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। যদি এমন চলতে থাকে তাহলে সারাদেশে বন্যার শঙ্কা দেখা দিবে। বৃষ্টিপাত যদি কমেও যায়, পাহাড়ি ঢল ও উজানের পানি না কমলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। মানুষের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে।
গত দুইদিনের প্রবল বৃষ্টিতে সিলেটসহ সারাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বন্যার খবর পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে নিম্ন অঞ্চলগুলো তলিয়ে গেছে। পানিবন্দী জীবন-যাপন করছে সাধারণ মানুষ। বন্যাকবলিত মানুষের বড় সংকট খাবার পানি৷ টিউবওয়েল ডুবে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানি পাওয়ার উপায় নেই৷ নিচু এলাকায় ঘরের ভেতর হাঁটু পানির কারণে রান্না বন্ধ৷ সিলেট জেলার ১৩টি উপজেলার ৮৫টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে৷ ৩২৬টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে৷ বর্তমানে ৯৫টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৭ হাজার ৩৪৯ জন আশ্রয় গ্রহণ করেছেন৷ স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, গত বন্যায় ২০০৪ সালের সালের বন্যাকে অতিক্রম করেছে। আর এবারের বন্যা ১৯৮৮ সালের বন্যাকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে।
অসহায়-দুর্গতদের মধ্যে সরকারি-বেসরকারিভাবে ত্রাণ তৎপরতা, বিভিন্ন প্রকার সহযোগিতা চোখে পড়লেও তা মোটেই পর্যাপ্ত নয়; বরং পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে প্রয়োজনের তুলনায় খুবই স্বল্প ও সীমিত। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহতায়ালা বন্যার্ত মানুষদের তুলনায় আমাদের অনেককেই ভালো রেখেছেন, সুখে-শান্তিতে রেখেছেন। আমরা যারা বন্যা পরিস্থিতি থেকে নিরাপদ রয়েছি, আমাদের মানবিক দায়িত্ব হচ্ছে, নিজেদের উপলব্ধি ও বিবেকবোধ জাগ্রত করা, বন্যাকবলিত অসহায় মানুষদের কথা ভাবা। দয়া ও ভালোবাসা পরবশ হয়ে আরও আন্তরিকতার সঙ্গে বন্যার্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসা।
তেমনি যারা বন্যায় আক্রান্ত হয়নি, তারাও ওই বন্যাদুর্গতদের জন্য ত্রাণসামগ্রী, খাদ্য, বস্ত্র, ওষুধ, খাবার স্যালাইন ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের মাধ্যমে তাদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারে। তাই বন্যাদুর্গতদের সাহায্যে এগিয়ে আসা দেশের ধনাঢ্য, সমাজের বিত্তবান, সংগতিসম্পন্ন ও মানবিক গুণসম্পন্ন ব্যক্তিদের দায়িত্ব হচ্ছে, সিলেটসহ সারাদেশের বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো। বন্যা উপদ্রুত এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে যার যা কিছু আছে, তা নিয়েই স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসুন।
এলাকার সেচ্চাসেবী, সমাজ কর্মী, রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গ ও বিত্তবানদের প্রতি সবিনয় অনুরোধ থাকবে, সকল বিভেদ ভুলে গিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই দুর্যোগ মোকাবেলায় সবাই এগিয়ে আসুন।
লেখক: শিক্ষক ও কলামিস্ট
মিল্লাত উচ্চ বিদ্যালয়, বংশাল, ঢাকা।
সিটিজেনটাইমস্/মোঃ আরফাতুর রহমান/অহ/এমই