আশীষ সাহা , ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায় এবার রসালো লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রায় ১৯ কোটি টাকা বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে। তাই উপজেলার বাগান মালিকদের মুখে উজ্জল হাসি ফুটেছে।
উপজেলায় প্রায় সব ধরনের কৃষিরই ভাল ফলন হয় তারই মধ্যে রসালো লিচুর সুনাম রয়েছে বাংলাদেশ জুড়ে। এখানকার লিচু সুস্বাদু হওয়ায় সারা দেশেই বিজয়নগর উপজেলায় ঘিরেই রসালে ফল লিচুুর চাহিদা ব্যাপকভাবে।
জানা যায়, প্রায় ৪০-৪৫ বছর পূর্ব থেকেই বিজয়নগর উপজেলায় লিচুর উৎপন্ন শুরু হয়। এখানকার জমি জায়গা ও শ্রমিকদের বেতন ভাতা অন্য এলাকায় থেকে তুলনায়মুলক কম হওয়াই লিচুর উৎপন্ন হয় বেশিহারে এরজন্যই জমিতে লিচুর রূপান্তর করেন সকল চাষীরা। ফলন হওয়ার পর থেকে দুই দফায় লিচু বিক্রি হয়। এর মধ্যে গাছে ফুল আসে প্রথম দফায় কৃষকদের কাছ থেকে গাছ কিনেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। গাছে ফুল শেষ হওয়ার মুকুল বের হওয়ার পর দ্বিতীয় দফায় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীদের কাছে গাছের লিচু বিক্রি করে আসছেন ।
উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সিঙ্গারবিল, আদমপুর, কালাছড়া, মেরাশানী, বিষ্ণুপুর, কাঞ্চনপুর, কাশিমপুর,
কামালমুড়া, হরষপুর, সেজামুড়া, মুকুন্দপুর, নোয়াগাঁও, পত্তন অলিপুর, কাশিনগর, ছতুরপুর, বক্তারমুড়া, রূপা, শান্তামুড়া, গোয়ালনগর, ভিটিদাউপুর, , এলাকায় লিচুর উৎপন্ন হয়। উপজেলার প্রায় প্রত্যেকের বাড়িতেই একটি করে লিচুর গাছ আছে। যাদের বাড়িতেই একটু জায়গা আছে, তারা প্রত্যেক বাড়িতে লিচুর গাছ লাগিয়ে থাকেন। আর এসব গাছে পাটনাই, বম্বে, চায়না থ্রি, চায়না ২, এলাচি, ৫ধরনের জাতীয় রসালো লিচুর উৎপন্ন হয়।
বিজয়নগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাব্বির আহমেদ বলেন, উপজেলায় এই বছর ৪৩০ হেক্টর জায়গায় লিচুর আবাদ হয়েছে। লিচু বাগান আছে ৯০০টি।
আবহাওয়া অনুকলে থাকলে ১৮ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা প্রায় লিচু বিক্রির সম্ভাবনা আছে।তাছাড়া উপজেলার সবগুলো লিচুর বাগানে কৃষি কর্মকর্তাদের তদারকির বিষয়ের জানতে চাইলে কর্মকর্তা বলেন, উপজেলায় আমাদের ৩০ কর্মকর্তার প্রয়োজন সেই জায়গায় ১৮জন দিয়ে কাজ চলছে। জনবল কম হওয়ার কারনেই সব বাগানে তদারকি করা যাচ্ছেনা বলে তিনি স্বীকার করেছেন।
উপজেলার সবচেয়ে বড় রসালো লিচুর বাজার হিসেবে পরিচিত হিসেবে হলো আউলিয়া বাজার। এছাড়াও সিংগারবিল, হরষপুর, চম্পকনগর বাজারে বিক্রি হয় অধিকাংশ লিচু। এসব বাজার থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ, শায়েস্তাগঞ্জ, কুমিল্লা, নরসিংদী, ভৈরব, নোয়াখালী, চাঁদপুর, কিশোরগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল, ফেনী ও রাজধানীর ব্যবসায়ীরা পায়কারী দরে লিচু কিনে নিয়ে যায়।
সেজামুড়া গ্রামের বাগান মালিক কাউছার ভূইয়া বলেন, আমার ৪টি বাগানে ১৭০টি গাছ আছে। গাছে এবছর ভালো লিচুর ফলন হয়েছে কিন্তু গত দুইদিন ধরে গরমের তাপে হটাৎ লিচু লাল হয়ে যাচ্ছে। তবে তিনি আশাবাদী এবছর ১২ লাখ টাকা লিচু বিক্রি করবেন।
ভিটিদাউদপুর গ্রামের বাগান মালিক আবুল কাসেম মোল্লা বলেন, বাগানে লিচু এসেছে পর্যাপ্তই কিন্তু সঠিক সময়ে বৃষ্টি না হওয়ায় এবং তাপমাত্রা বেশি হওয়ায় অসময়ে লাল হয়ে যাচ্ছে আর ফেটে যাচ্ছে। কৃষি অফিসাররা কোন যোগাযোগ করেন না বলে তিনিও অভিযোগ করেন।
সবচেয়ে বেশি পাহাড়পুর ইউনিয়নের লিচু বাগান রয়েছে সেখানের দায়িত্বরত কৃষি কর্মকর্তা মো: আশরাফুল আলমকে তাপমাত্রার কারনে লিচু লাল হয়ে যাওয়া ও কৃষকদের বাগানে তদারকি করেন না এমন প্রশ্নে উত্তরে তিনি বলেন , লিচু বেশি তাপমাত্রার কারনে লাল হয়ে যাচ্ছে তবে বৃষ্টি হলে ঠিক হয়ে যাবে। কৃষকদের কাছাকাছি কম যাওয়া হয় কারন হিসেবে তিনি জানান, পাহাড়পুর ইউনিয়নে ৩জন কর্মকর্তা থাকার কথা সেখানে আমি ১জন কাজ করছি। যারা যোগাযোগ করেন তাদের বাগানেই যান বলে তিনি জানান।আর আমাদের উপজেলায় লোকবল কম থাকায় আমরা সব জায়গায় যেতে একটু দেরি হয়,আর যেখান থেকে মোবাইল আসে আমরা দ্রুত চেষ্টা করি তাদের লিচুর বাগানে যাওয়ার জন্য।