পর্যটক গমণ সীমিত করণ কোন প্রতিকার নয়, বরং সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিংয়ের মাধ্যমে সেন্ট-মার্টিন দ্বীপকে আরো পর্যটকবান্ধব করে দেশের পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন ও সেন্ট-মার্টিন দ্বীপের স্থানীয় অধিবাসীদের শিক্ষা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব) এর নেতৃবৃন্দ। শনিবার (১১ জুন) সকালে ঢাকা ক্লাবে ”পর্যটন বাঁচান, সেন্ট মার্টিন বাঁচান” শিরোনামে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তাঁরা। দেশে সমুদ্র ভ্রমণের সুযোগ সংকুচিত হলে পর্যটকরা বিদেশ মুখী হবে এবং আমাদের কষ্টার্জিত বিপুল পরিমান অর্থ বিদেশে চলে যাবে। ফলে এই সিদ্ধান্ত চরম আত্মঘাতি বলে মন্তব্য করেন তাঁরা। পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের স্বার্থে সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ সীমিত না করে বরং সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনা ও নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে জীব-বৈচিত্র ও প্রাকৃতিক পরিবেশ অক্ষুন্ন রেখে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের ভ্রমণ নিশ্চিতেরও জোর দাবি জানান নেতারা।
উল্লেখ্য, কক্সবাজার সৈকতে ঘুরতে আসা দেশী-বিদেশী পর্যটকগণের প্রধান আকর্ষণ প্রবাল বেষ্টিত সেন্ট-মার্টিন দ্বীপ ও এর আশেপাশের এলাকা। প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক দেশী-বিদেশী পর্যটক উক্ত স্থানগুলোতে অবস্থান করে এর জীব-বৈচিত্র ও প্রাকৃতিক সৈৗন্দর্য্য উপভোগ করে। পাশাপাশি মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন অত্র দ্বীপাঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের একমাত্র উপার্জনের উৎস এই ট্যুরিজম। একে ঘিরে তৈরি হয়েছে পর্যটকবাহী নৌযান, হোটেল-মোটেল, সাথে জনপ্রিয়তা পাচ্ছিল তরুণদের ট্যুর গাইড সেবাও। সব মিলিয়ে ক্রমান্বয়ে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠা এই দ্বীপটিতে অতিরিক্ত পর্যটক গমণ পরিবেশের জন্য হুমকি বিবেচনা করে সেখানে পর্যটন সীমিত করণের সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। এতে সেন্টমার্টিনকে ঘিরে ট্যুর সংশ্লিষ্টদের মধ্যে একধরনের আতংক বিরাজ করছে। দেশী-বিদেশী পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় এই স্থানে যাতায়াত সীমিত করণের উদ্যোগটি অন্তত এই করোনা মহামারির পর আরেক বড় বিপর্যয় ও আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত বলে মনে করছে তারা। তাই সেন্টমার্টিন তথা দেশের ট্যুরিজমকে বাঁচাতে সরকারকে উক্ত সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার জোর দাবি জানিয়ে উক্ত সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ট্যুর অপারেটরদের শীর্ষস্থানীয় এই সংগঠনের নেতারা।
সংবাদ সম্বেলনে প্রধান অতিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন টোয়াবের সদ্য বিদায়ী সভাপতি ও বাংলাদেশে ট্যুরিজম বোর্ডের গভর্ণিং বডির সদস্য মোঃ রাফেউজ্জামান। হোটেল ওনার্স এসোসিয়েশন অব সেন্টমার্টিন্স (হোস্ট) এর সাধারন সম্পাদক আবু জাফর পাটোয়ারী, সী ক্রুজ অপারেটর ওনার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (স্কোয়াব) সভাপতি তোফায়েল আহমেদ, সাধারন সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর, টোয়াবের সহসভাপতি মোঃ সাহেদ উল্লাহ্, টোয়াবের পরিচালকবৃন্দ, টোয়াবের সদস্যবৃন্দ, ট্যুরিজম স্টেকহোল্ডারসহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দও এসময় উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন টোয়াবের সভাপতি জনাব শিবলুল আজম কোরেশী।
উল্লেখ্য, সেন্টমার্টিন দ্বীপের স্থানীয় ১০ হাজার বাসিন্দাসহ জীবিকার তাগিদে আসা দেশের বিভিন্ন এলাকার আরও ৪ হাজার এবং নধপশধিৎফ ষরহশধমব হিসাবে টেকনাফ, কক্সবাজারসহ দেশের প্রায় ৫ লক্ষ লোক তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। তন্মধ্যে শতকরা ৯০ ভাগ মানুষের আয়-রোজগারের একমাত্র খাত এই পর্যটন। ৫ মাস পর্যটনের আয় দিয়ে বাকী ৭ মাস তারা জীবিকা নির্বাহ করে। ফলে বিকল্প ব্যবস্থা না করে সেন্ট-মার্টিনে ভ্রমণ সীমিত করা বাংলাদেশের পর্যটন খাতে বিরুপ প্রভাব ফেলবে নিশ্চিত। পর্যটক প্রবেশ সীমিত করা মানে বাসিন্দাদের একমাত্র রোজগারের উপর হস্তক্ষেপ। আর এতে দ্বীপে বসবাসরত অসহায় জনসাধারণ তথা পর্যটন সংশ্লিষ্টদের উপর নেমে আসবে মানবিক বিপর্যয়। বিশেষ করে অর্থাভাবে দ্বীপের তরুণ প্রজন্মের শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত ও তারা অন্ধকার পথে পা বাড়ানোসহ তাদের স্বাস্থ্য হানি ঘটবে।
সেন্টমার্টিনের জীববৈচিত্র তথা পরিবেশ রক্ষায় পর্যটক সীমিত করণই একমাত্র সমাধান নয়। অনেক বিজ্ঞানসম্মত উপায়ও আছে, যার মাধ্যমে সেন্টমার্টিনের জীব বৈচিত্র তথা ঐতিহ্য রক্ষা করা সম্ভব। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন হচ্ছে; মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন সেন্টমার্টিনের অসহায় মানুষগুলো এবং পর্যটন সংশ্লিষ্ট তরুণ উদ্যোক্তাদের উপার্জনের এই মাধ্যমকে সীমিত করণের উদ্যোগের ফলে যে মানাবিক বিপর্যয় নেমে আসবে সেটাই বরং পরিবেশের জন্য চরম হুমকি।