নোয়াখালী প্রতিনিধি:
অনুমোদনহীন বিদ্যুতের লাইন নির্মাণে বাধা দেওয়ায় নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাটে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) একজন উপ-সহকারীকে মারধর ও মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার ঘটনায় থানায় বাহক মারফত লিখিত অভিযোগ পাঠানো হলেও পুলিশ মামলা নেয়নি। পুলিশ বলেছে, অভিযোগকারী নিজে থানায় যেতে হবে এবং মারধরের ঘটনায় চিকিৎসকের সনদপত্র নিয়ে যেতে হবে।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) বিকেলের দিকে হামলার শিকার প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম এমন অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, গতকাল বুধবার সন্ধ্যার পর বিউবোর কোম্পানীগঞ্জ কার্যালয়ের লাইনম্যান মো. মামুনকে লিখিত অভিযোগ নিয়ে থানায় পরিদর্শকের (তদন্ত) কাছে যান। তিনি তাকে বলেন, ডাক্তারি সনদসহ অভিযোগকারী থানায় আসতে হবে। তখন তাকে শারীরিক অবস্থার কথা জানালে বলেন তাহলে ডাক্তারি সনদ নিয়ে আসতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোম্পানীগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমান বলেন, তার কাছে অভিযোগ নিয়ে যাওয়ার কথা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, অভিযোগ নিয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কাছে যাবে, আমার কাছে কেন আসবে। আমি সাক্ষী দিয়ে বুধবার রাতে থানায় ফিরেছি।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাদেকুর রহমান বলেন, বুধবার সন্ধ্যা থেকে তিনি থানায় ছিলেন। তার কাছে কেউ কোন অভিযোগ নিয়ে আসেনি। এলাকার সবাই জানে, এ ঘটনায় অভিযোগ দিলে আমি নেব না, পাগল? আমার কাছে আসেনি। আমি তদন্তকে জিজ্ঞেস করব।
তবে থানায় যাওয়া বিউবোর লাইনম্যান মামুন প্রকৌশলী সাইফুল ইসলামের অভিযোগ নিয়ে থানায় যাওয়ার এবং গ্রহণ না করায় সেখান থেকে ফিরে আসার বিষয়টি সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেছেন। এরপর তিনি বিষয়টি প্রকৌশলী সাইফুলকে জানিয়েছেন বলেও জানান।
উপ-সহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম অভিযোগ করেন, তাঁর উপর হামলা চালানো হলেও তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ভয়ে তার পাশে দাঁড়াচ্ছেন না। তিন সদস্যের যে তদন্ত কমিটি গঠণ করা হয়েছে, তাদের মধ্যে একজন রয়েছেন যিনি তাঁর ওপর হামলার ঘটনার নেপথ্যে থাকতে পারেন বলে তাার সন্দেহ। কারণ যে প্রকল্পের অধীন নতুন বিদ্যুৎ লাইনটি নির্মাণের জন্য বিউবোর ঠিকাদারের লোকজন এসেছিল, তিনি ওই প্রকল্পের অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছেন।
সাইফুল ইসলামের অভিযোগ, অবৈধ লাইন নির্মাণের সঙ্গে জড়িত চক্রের সদস্যরা এখন উঠেপড়ে লেগেছেন তাকে ফাঁসানোর জন্য। তারা এখন হামলাকারীদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে উল্টো তার বিরুদ্ধে নানা কল্পকাহিনী প্রচার করছেন। অথচ তিনি আবাসিক প্রকৌশলী সাইফুল ইসলামের (একই নামের নাম) নির্দেশে অনুমোদনহীন অবৈধ বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণ বন্ধ করতে গিয়েছিলেন।
প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম জানান, তিনি ও তার পরিবার ভয় এবং আতংকের মধ্যে রয়েছেন। বর্তমানে তিনি নোয়াখালীর চৌমুহনীতে তার আত্মীয়ের বাসায় আশ্রয় নিয়েছেন। হাসপাতাল থেকে চিকিৎসার টোকেন নিয়ে আজ পুণরায় অভিযোগ নিয়ে থানায় পাঠাবেন। মামলা নেওয়া না হলে তিনি আদালতের আশ্রয় নিবেন।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার বিকেলে বসুরহাট পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বৈদ্যনিগো বাড়ির দরজায় অনুমোদনহীন একটি বিদ্যুৎলাইন নির্মাণ কাজে বিউবোর ঠিকাদারের লোকজনকে বাধা দেন বিউবোর কোম্পানীগঞ্জ কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. সাইফুল ইসলাম। এ সময় লাইন নির্মাণের সঙ্গে জড়িত স্থানীয় যুবলীগের মো. খোকন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের শিপন ও টিপুসহ কয়েকজন তাঁকে মারধর করেন। যার এক পর্যায়ে তাকে পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বাড়ির সামনের একটি দোকান সংলগ্ন ঘরে আটকে দ্বিতীয় দফায় মারধর করা হয়। সেখানে সেতুমন্ত্রীর ছোট ভাই শাহদাত হোসেনও তাকে মারধর করেন। এক পর্যায়ে তারা তার মাথার চুল কেটে ন্যাড়া করে আটকে রাখে। পরে রাত আটটার দিকে ফেনী থেকে বিউবোর লোকজন এসে তাকে উদ্ধার করেন।