শিক্ষানবিশ চিকিৎসক মন্দিরা মজুমদারের আত্মহত্যার পর থেকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপতালের আবাসিক কর্মকর্তা সুহাস রঞ্জন হালদার লাপাত্তা। মেয়ের আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে বাবা প্রদীপ মজুমদার ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার ও তার বড় বোন সিঁথি মনি হালদারের নামে মামলা দায়ের করেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, ২ মে থেকে ১১ মে পর্যন্ত ছুটি নিয়েছেন তিনি। এরপর থেকে অনুপস্থিত রয়েছেন। শুক্রবার (১৩ মে) গভীর রাতে মোংলা থেকে সিঁথি মনি হালদার গ্রেফতার হলেও ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার রয়েছেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, গেল বছরের ডিসেম্বরে খুলনা গাজী মেডিক্যাল কলেজ
হাসপাতাল থেকে মন্দিরা এমবিবিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। বাসায় থেকে বিসিএস পরীক্ষায়
অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এর আগে,
ওই চিকিৎসকের বাবা অসুস্থ হয়ে খুমেক হাসপাতালে ভর্তি হলে আবাসিক কর্মকর্তার সঙ্গে পরিচয়
হয়। এরপর প্রেমের প্রস্তাব দিলে মন্দিরা সাড়া দেন। আবাসিক কর্মকর্তার সঙ্গে সম্পর্ক
গভীর থেকে গভীর হয়। পরবর্তীতে তাদের মধ্যে দৈহিক সম্পর্ক হয়।
মন্দিরার পরিবারের অভিযোগ, সুহাসের বড় বোনের বাসায় গিয়ে তারা শারীরিক
সম্পর্কে লিপ্ত হতো। অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে বিষয়টি পরিবারের সদস্যদের
জানান মন্দিরা। সবকিছু জেনে বাবা খুমেক হাসপাতালের আবাসিক কর্মকর্তা সুহাসের কাছে যান।
কোন সমাধান না হওয়ায় পরে সম্মানের ভয়ে মন্দিরা আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেন। এপ্রিল মাসের
২৮ তারিখ সন্ধ্যায় বাসায় কেউ না থাকায় নিজ ঘরে ফ্যানের হুকের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা
করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সুকান্ত দাস বলেন, খুমেক হাসপাতালের আবাসিক কর্মকর্তা সুহাস ঘটনার পর থেকে আত্মগোপনে রয়েছেন। তবে শুক্রবার রাতে তার সিঁথি মনি হালদার বোনকে মোংলা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদিকে ফেসবুক অ্যাকাউন্টের সমস্যা সমাধানের সুযোগে কলেজছাত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন পিবিআই পরিদর্শক মঞ্জুরুল আহসান মাসুদ। কৌশলে ডেকে নিয়ে ওই কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মাসুদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। রোববার (১৫ মে) রাতে ভুক্তভোগীর বাবা সদর থানায় এ মামলা করেন।
মামলার বিবরণীতে জানা গেছে, ওই কলেজছাত্রী কয়েকদিন আগে ফেসবুক অ্যাকাউন্টের
সমস্যার কথা পিবিআই পরিদর্শক মাসুদকে জানান। সমাধানের আশ্বাসে তরুণীর সঙ্গে নিয়মিত
ফোনে যোগাযোগ রাখতেন মাসুদ। রোববার (১৫ মে) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ছোট মির্জাপুর রোডের
একটি অফিসে দেখা করতে গেলে তরুণীকে ধর্ষণ করেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। ভুক্তভোগীর অভিযোগের
পরিপ্রেক্ষিতে পরে তালা ভেঙে অফিসে প্রবেশ করে প্রাথমিকভাবে ঘটনার সত্যতা পায় পুলিশ।ভুক্তভোগীকে
ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য খুমেক হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে নেওয়া হয়েছে।
ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত মাসুদ পলাতক রয়েছেন।
সোমবার (১৬ মে) সকালে খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান
আল মামুন বলেন, ওই কলেজছাত্রীর বাবা ইন্সপেক্টর
মঞ্জুরুল হাসান মাসুদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করেছেন। ঘটনাস্থানে অভিযান চালিয়ে এ
ঘটনায় সহায়তা করেছেন এমন একজনের সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। মাসুদকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে ডা. সুহাস গ্রেফতার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন মন্দিরা মজুমদারের
পরিবার ও সচেতন মহল। প্রভাবশালী বা ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়ায় তিনি পালিয়ে রয়েছেন বলে
দাবি তাদের। অনরূপভাবে কলেজছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত পিবিআই পরিদর্শক মঞ্জুরুল
আহসান মাসুদও যেন লাপাত্তা হতে না পারেন সে দাবি কলেজছাত্রীর পরিবারের।
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার খুলনা জেলা সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট
মো. মোমিনুল ইসলাম বলেন, মন্দিরা মজুমদারের
আত্মহত্যার প্ররোচনাকারী ডা. সুহাস রঞ্জন হালদারের মতো কলেজছাত্রী ধর্ষণের অভিযুক্ত
পরিদর্শক মঞ্জুরুল আহসান মাসুদও যেন লাপাত্তা না হয়ে যান। একজন নবীন এমবিবিএস চিকিৎসক
অকালে চলে যাওয়ায় হতবাক ও ক্ষুব্ধ হয়েছেন বিবেকবান মানুষ।
অনুরূপভাবে পিবিআই পরিদর্শক মাসুদের কাছে সাহায্য নিতে গিয়ে কলেজছাত্রী
ধর্ষণের শিকার হওয়ার ঘটনাও হতবাক করেছে সবাইকে।তিনি আরও বলেন, ভুক্তভোগীর পরিবার যদি
আইনি সহায়তা চায় তাহলে আমরা সহযোগী করতে প্রস্তুত আছি।