বন্যায় পানিবন্দী ও আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান
নেওয়া মানুষগুলোর মধ্যে তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। নৌকার সংকট থাকায় বন্যাকবলিত দুর্গম এলাকাগুলোতে ত্রাণ নিয়ে যাওয়া খুব একটা সম্ভব হচ্ছে না।এমনকি সরকারি ব্যবস্থাপনায় চালু হওয়া আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় খাদ্যসামগ্রী পৌঁছানো যাচ্ছে না। খাদ্যগুদামের আশপাশে পানি থাকায় অনেক ক্ষেত্রে সেখান থেকেও খাদ্যসামগ্রী বের করা যাচ্ছে না। তাতে তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে।
স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় সিলেট জেলার পরিস্থিতি মারাত্মক অবনতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান। তিনি বলেন, সিলেটের ১৩টি উপজেলা, ৫টি পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন বন্যা উপদ্রুত।তিনি বলেন, গত বুধবার (১৫ জুন) থেকে ভারি বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার মুখোমুখি হয়েছে সিলেটের মানুষ।
তিনি জানান, পরিস্থিতি মোকাবেলায় পরদিন বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা করি এবং কন্ট্রোল রুম খোলা হয়। পাশাপাশি পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও কিট বক্স সরবরাহে জনস্বাস্থ্য নির্বাহী প্রকৌশল অধিদপ্তরকে অনুরোধ করি। আশ্রয় কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের সাহায্য চাওয়া হয়। খোলা হয় ৪৯৭টি আশ্রয় কেন্দ্র। যেখানে বর্তমানে ২ লাখ ৩০ হাজার ৬৩২ জন মানুষ এবং ৩১ হাজার গবাদিপশু রয়েছে।
উপদ্রুত এলাকায় বোতলজাত বিশুদ্ধ পানি ও ৪টি বিশুদ্ধকরণ ওয়াটার প্ল্যান্টের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে আড়াই লাখ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সরবরাহ করা হয়েছে। ১৪০টি মেডিক্যাল টিম কাজ করছে।
বন্যাকবলিতদের জন্য বরাদ্দকৃত ত্রাণের মধ্যে ৬১২.৪২০ মেট্রিক টন চাল, ৮ হাজার ১১৮ প্যাকেট শুকনো খবার থেকে ৭ হাজার ৯শ’ প্যাকেট বিতরণ করা হয়।এছাড়া নগদ ৯২ লাখ টাকা থেকে ৩৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
তবে বর্তমানে বরাদ্দকৃত চাল নেই। শুকনো খাবার আছে মাত্র ২১৮ প্যাকেট। অবশ্য নগদ টাকা আছে ৫৬ লাখ ৫০ হাজার।জেলা প্রশাসক বলেন, প্রথম দিনেই (১৬ জুন) আশ্রয় কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের সাহায্য চাওয়া হয়। ওইদিন ১৩ উপজেলায় জিআর চাল ৪৩২ মেট্রিক টন ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ২ হাজার ৯ বস্তা শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়।
১৭ জুন, আরো ৫ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বরাদ্দ দেন এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনাক্রমে দুযোর্গ ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১২ এর ৩০ ধারা অনুযায়ী সেনাবাহিনীর সহায়তা চাওয়া হয়। পাশাপাশি এসএসসি পরিক্ষা স্থগিত করা হয়। বন্যায় প্লাবিত নগরের বিদ্যুৎ সাবস্টেশন সুরক্ষিত রাখা হয়।
এরপর স্থানীয় প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর ১৩টি ব্যাটালিয়ন, ৬০টি বোট বন্যার্তদের উদ্ধার, চিকিৎসা, নিরাপদ স্থানে আশ্রয়ন ও বিশুদ্ধ খাবার সরবরাহে নিয়োজিত আছে। নৌবাহিনীর ১০০ জন সদস্য ১২টি নৌকা নিয়ে তাদের কার্যক্রম সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জে চালিয়ে যাচ্ছে।১৮ জুন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী গোয়াইনঘাট ও জৈন্তপুর এলাকা এবং আগেরদিন কোম্পানীগঞ্জ এলাকা পরিদর্শন করেন। এদিন বিভাগীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সরকারের দুযোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, আবহাওয়া অধিদপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে আগেই বন্যার বিষয়ে আগাম তথ্য না দেওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক বলেন, আগাম কোনো তথ্য না পেলেও ১৫ জুন থেকে ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় জেলা প্রশাসন দুর্গত এলাকা থেকে মানুষকে উদ্ধারে পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বন্যাকবলিত এলাকায় নৌকার তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এতে অসহায় মানুষের কাছে খুব একটা যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এমনকি সরকারি ব্যবস্থাপনায় চালু হওয়া আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় খাদ্যসামগ্রী পৌঁছানো যাচ্ছে না। এ ছাড়া খাদ্যগুদামের আশপাশে পানি থাকায় অনেক ক্ষেত্রে সেখান থেকেও খাদ্যসামগ্রী বের করা সম্ভব হচ্ছে না। আশ্রয়কেন্দ্রে এসেও লোকজন আরেক ভোগান্তিতে রয়েছে। স্থানের তুলনায় এসব আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষের সংখ্যা বেশি। গবাদিপশু–পাখির সঙ্গে গাদাগাদি করে একই কক্ষে আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তিরা শুক্রবার রাত কাটিয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে থাকার উপযোগী পর্যাপ্ত সুবিধা নেই। এমনকি খাবারও পাচ্ছে না অনেকে, ফলে খাবার না পেয়ে অভুক্ত অবস্থাতেই আছেন তারা।
অন্যদিকে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় বন্যা কবলিত একালাগুলো থেকে মানুষদের উদ্ধার করতে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, কোস্ট গার্ডের সদস্যরা যৌথভাবে কাজ করছেন। ইতোমধ্যে হাজারো মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছে দিয়েছেন তারা। সবমিলিয়ে কিছুটা স্বস্তিতে আছেন এসব মানুষরা, তবে খাদ্যের অভাবে ক্ষুধা নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বানভাসি মানুষরা।