English

গ্রীষ্মকালীন ফলের পুষ্টিগুন

গ্রীষ্মকালীন ফলের পুষ্টিগুন
ফিচার

ডা. ফারজানা আক্ তার


বাংলাদেশ  ষড়ঋতুর দেশ।বছরের সবচেয়ে উষ্ণতম কাল হল গ্রীষ্মকাল। আমাদের দেশে গ্রীষ্মকাল বলতে সাধারণত বৈশাখ ও জৈষ্ঠ্য মাসকে বুঝায়। গ্রীষ্মকালকে ফলের ঋতু বলা হয়। অনেকে আবার এই সময়কে মধু মাস বলে থাকে। এই গ্রীষ্মকালে অনেক রকমের রসালো ফলমূল পাওয়া যায়। এই সময়  কাঠাঁল,  আম,  কালোজাম,  লিচু,  লটকন,  তালের  শাঁস প্রভৃতি রসালো ফল পাওয়া যায়। গ্রীষ্মকালীন ফলমূল এর পুষ্টিগুন নিম্নে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলাঃ

কাঠাঁলঃ  কাঠাঁল আমাদের জাতীয় ফল এবং খেতেও অনেক সুস্বাদু। এই ফলে পটাশিয়ামের ভালো উৎস রয়েছে যা উচ্চরক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। কাঠাঁলে রয়েছে ভিটামিন -সি এবং ভিটামিন-এ। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ভিটামিন-সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি  করে  এবং সেই সাথে চুল, দাঁত ও দাঁতের মাড়ি সুস্থ রাখতে সহায়তা করে ভিটামিন-এ ( অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট) রাতকানা প্রতিরোধে সহায়তা করে। এই  অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট  শরীরে সর্দি কাশি রোগ সংক্রমন  থেকে রক্ষা করে। কাঠাঁলে থাকা ভিটামিন- বি ৬ হৃদরোগ এর ঝুঁকি কমায়।  এই ফলে বিদ্যমান আঁশ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে। কাঁঠালে রয়েছে খনিজ উপাদান আয়রন যা দেহের রক্তস্বল্পতা দূর করে, কাঁঠালে থাকা ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস আলসার, ক্যান্সার,  উচ্চরক্তচাপ এবং বার্ধক্য প্রতিরোধে সহায়তা করে।

আমঃ পছন্দের তালিকায় এই গ্রীষ্মকালে আম একটি সুস্বাদু ফল। আমে থাকা ভিটামিন-এ চোখকে ভালো রাখতে সহায়তা করে এবং রাতকানা প্রতিরোধ করে। এছাড়াও আমে বিদ্যমান ভিটামিন-এ চুল ও ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষায়  সহায়তা করে।  আমে উপস্থিত ভিটামিন-সি ( অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট)  রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা  বৃদ্ধি করে। আমের মধ্যে আয়রন থাকে যা রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি এবং গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খুবই উপকারী।  আমে রয়েছে ভিটামিন- বি৬ যা মস্তিষ্কের উন্নতি ঘটায়।  আমের মধ্যে বিদ্যমান ক্যারোটিনয়েডস, অ্যাসকরবিক এসিড, টার্পিনয়েডস এবং পলিফেনল এইসব অ্যান্টিক্যান্সার বৈশিষ্ট্যযুক্ত।

কালোজামঃ দেশীয় ফলের মধ্যে কালোজাম অন্যতম। এই ফলের পুষ্টিগুন অনেক।  এতে বিদ্যমান আয়রন রক্তস্বল্পতা সমাধানে সাহায্য করে। জামে বিদ্যমান ভিটামিন-সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।  জামের বিচি ও জাম নিয়মিত সেবনে রক্তের সুগার লেভেল ৩০% কমায়।একটি গবেষনায় দেখা গিয়েছে, জামে গুকোজ, ফ্রুক্টোজ এবং ডেক্সটোজ আছে যা আমাদের ক্লান্তিভাব দূর করে শরীরে শক্তি জোগায়, জামে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে যা ক্যান্সার সেল গঠনে বাঁধা দেয়।  জামে বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এলজিক এসিড এন্থোসায়ানিন এবং এন্থোসায়ানিডিস শরীর থেকে বাজে কোলেস্টেরল দূর করার সাহায্য করে।

তালের শাঁসঃ অত্যন্ত রসালো ও সুস্বাদু ফল ।  একে কচি তাল ও বলা হয়। ১০০ গ্রামের তালের শাঁসে ৯২ দশমিক ৩ শতাংশই থাকে জলীয় অংশ। যা এই গরমে শরীরকে ঠান্ডা ও সতেজ রাখতে সহায়তা করে। শরীরের পানির ঘাটতি মেটাতেও সহায়তা করে,  এতে বিদ্যমান ক্যালসিয়াম হাড় গঠন ও হাড়ের রোগ প্রতিরোধ সহায়তা করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ভিটামিন-সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

লিচুঃ  লিচু রসালো সুস্বাদু ফল। প্রতি ১০০ গ্রাম লিচুতে রয়েছে ৮৪ দশমিক ১ শতাংশ জলীয় অংশ, শর্করা ১৩ দশমিক ৬ গ্রাম,  ক্যালসিয়াম ১০ মিলিগ্রাম ও ভিটামিন-সি  ৩১ মিলিগ্রাম।  এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে হাঁড় গঠনে সহায়তা করে । দাঁতকে মজবুত করে এবং শরীরে পানির ঘাটতি পূরনের মাধ্যমে দেহকে সতেজ রাখে।

লটকনঃ লটকনে ক্যালরি ও ফ্যাট কম থাকে তাই ডায়াবেটিস রোগীর জন্য উপকারী।  অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে এটি। রুচি বাড়াতে, বমি বমি ভাব দূর করতে এবং মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে, এতে বিদ্যমান পটাসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখে। এতে রয়েছে ভিটামিন-সি,  যা স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। এছাড়াও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ভিটামিন-সি।

গ্রীষ্মকালীন ফল যেমন উপকারী ঠিক তেমনি এইগুলো অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণের ফলে রক্তে সুগারের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে, বদহজম ইত্যাদি দেখা দিতে পারে ।  এই ফলগুলো যেহেতু রসালো এবং মিষ্টি  সমৃদ্ধ তাই ডায়াবেটিস এর রোগীরা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাবেন।



লেখক : ডা. ফারজানা আক্ তার

এমবিবিএস,এমএসসি ( নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড সায়েন্স)

প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউদ্দিন হেলথ এন্ড নিউট্রিশন একাডেমি

কনসালটেন্ট নিউট্রিশন স্লিম অ্যান্ড বোল্ড



সিটিজেনটাইমস/অহ/এমই