ডা. ফারজানা আক্ তার
ক্যান্সার কি:
মানব দেহে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কোষের সমষ্টি এবং এ কোষ বিভাজন একটি সুনির্দিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী হয়ে থাকে। কিছু কিছু কারণে কোষগুলোর পূর্ব নির্ধারিত বিভাজন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিভাজিত হয়ে থাকে। এর ফলে তৈরি হয় টিউমার। এই টিউমার দুই ধরনের; বিনাইন বা কম ক্ষতিকারক এবং ম্যালিগ্ন্যান্ট বা ক্ষতিকারক যা সাধারণভাবে ক্যান্সার নামে পরিচিত।
ক্যান্সারের কারণসমূহ:
* বিড়ি-সিগারেট, পান-জর্দা, গুল, সাদাপাতা ব্যবহার।
* অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস যেমন অধিক চর্বিযুক্ত, চিনিযুক্ত ,ভাজাপোড়া খাবার।
* অধিক শারীরিক ওজন বা স্থুলতা।
* শারীরিক পরিশ্রমের অনাভ্যাস
* মদ্যপানের অভ্যাস
* ঘন ঘন সংক্রামনের শিকার
* পরিবেশ দূষণ
ক্যান্সার প্রতিরোধে গ্রহনীয় খাবার:
১. শাকসবজি:
* বাধাকপিঃ
এতে রয়েছে অ্যান্টঅক্সিডেন্ট ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস সালফোরাফের যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। এই সালফোরাফন স্তন কোলন এবং প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
* ফুলকপিঃ
ফুলকপিতে রয়েছে সালফোরাফেন যা ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কোষ ধ্বংস করতে পারে এবং টিউমারের বৃদ্ধিকে বাঁধা দেয়। ফুলকপির সাথে হলুদ যোগ করে গ্রহন করলে প্রোস্টেট ক্যান্সার নিরাময়ে ও প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এচাড়া পাকস্থলী, প্রোষ্টেট, স্তন ও ডিম্বাশয় ক্যান্সার প্রতিরোধেও সাহায্য করে ফুলকপি।
* ব্রোকলিঃ
এতে রয়েছে গ্লুকোসা্নোলেটস যা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
* গাজরঃ
গাজরের মধ্যে ক্যারটিনয়েড অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। আমাদের খাদ্য হজমের পর খাদ্যের কিছু উচ্ছিষ্ট আমাদের শরীরে খেকে যায়। যাকে ফ্রি র্যাডিকেলস শরীরের কিছু কোষ নষ্ট করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার এই ধরনের ফ্রির্যাডিকেলসের বিরুদ্ধে লড়াই করে, শরীরে ক্যান্সারের কোষ উৎপাদন কম হয়।
* টমেটোঃ
এতে রয়েছে লাইকোপেন যা ক্যান্সার প্রতিরোধ কার্যকর ।
* মিষ্টি আলুঃ
মিষ্টি আলুর খোসার রঙ্গের জন্য দায়ী বিটা ক্যারোটিন একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিকার সিনোজেনিক উপাদান। বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার নিরাময়ে বিটা ক্যারোটিন এবং ভিটামিন সি অত্যন্ত কার্যকারী যা মিষ্টি আলুতে থাকে।
* মিষ্টি কুমড়াঃ
* বিটঃ
এতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে বিটালেইনস (Betalains)যা একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস। এই উপাদান স্তন ও প্রোষ্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহাস্য করে।
* লাল শাকঃ
এতে রয়েছে এনথোসায়ানিনস যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
* পালং শাকঃ
এতে রয়েছে প্রচুর প্রচুর পরিমানে লুটেইন যা একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
* শসাঃ
শসাতে রয়েছে ফ্ল্যাভিনয়িডস এবং টানন্নিস যা শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস এর মাধ্যমে আমাদের শরীরে ক্ষতিকারক ফির্যাডিকেলস তৈরি হয় না এবং ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহয্য করে।
* লেটুস পাতাঃ
এতে রয়েছে ক্যারাটিনয়েড/লুটেইন এবং জেক্সাজেনসিন যা শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসাবে কাজ করে।
* ঢেড়সঃ
এতে রয়েছে ফ্ল্যাভিনয়িড অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস যেমন বিটা ক্যারোটিন, জেনসিন এবং লুটেইন যা ফুসফুসের এবং মুখগহ্বরের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
* ডাঁটা (পুই)
* সাজনা
* লেবুঃ
লেবুতে রয়েছে ভিটামিন সি যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। এছাড়াও লেবুর খোসাতে রয়েছে লিমোনয়িডস নামে উপাদান যা তিক্ত স্বাদ, এই উপাদান ক্যান্সার সেল এর বৃদ্ধিকে কমিয়ে দেয়।
* পুঁই শাকঃ
এতে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস যেমন – বিটাক্যারোটিন, লুটেইন এবং জেক্সাজেনশিন যা ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।
২. ফলমূল:
* কলাঃ
পাকা কলায় রয়েছে শক্তিশালী উপাদান টিউমার নেক্রোসিস ফ্যাক্টর (TNF)যা ক্যান্সার সেল এর বৃদ্ধিতে বাধা প্রদান করে।
* আনারসঃ
এতে রয়েছে ব্রোমেলেইন এনজাইম যা ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।
* বেদানাঃ
বেদানায় থাকে ফ্ল্যাভিনয়িডস এবং টানন্নিস/টান্নিন্স উভয়েই শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে।
* আপেলঃ
এতে রয়েছে প্রোসায়ানিডিনস এবং আপেলের খোসায় রয়েছে টাইন্টের পেনয়িডস এই দুইটি উপাদান ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।
* টক জাতীয় ফলঃ
টক জাতীয় ফল যেমন- কমলা, জাম্বুরা, মালটা ইত্যাদি । এতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ফ্ল্যাভিনয়িডস যা একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস এবং রয়েছে ভিটামিন সি। উভয়েই ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাজ করে।
* তরমুজঃ
তরমুজে রয়েছে লাইকোপেন একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে।
* আঙ্গুর
এতে রয়েছে রেসভিরাট্রল (Resveratrol)নামে শাক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস যা অ্যান্টি ক্যান্সার উপাদান হিসেবে কাজ করে।
* পেয়ারাঃ
এতে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস লাইকোপেন যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে।
* নাশপতিঃ
এতে রয়েছে কুয়ারসেটিন (Quercetin)একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
* পাঁকা পেঁপেঃ
এতে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
* স্ট্রবেরী
৩. রান্নায় ব্যবহৃত উপাদান (মসলা)
* পেয়াজ
* আদা
* রসুন
* হলূদ
* গোলমরিচ
* লবঙ্গ
* মেথি
* কালো জিরা
* তুলসি পাতা
৪. অন্যান্য খাবার
* ডাল (মসুর, মুগ ডাল ইত্যাদি)
* রাজমার দানা (কিডনী বিনস)
* কাঠ বাদাম, আখরোট
* ব্রাউন রাইস
* ওটস
* বিভিন্ন ধরনের বীজ
৫. পানি:
* দৈনিক কমপক্ষে ১০ থেকে ১২ গ্লাস পানি পান করতে হবে।
ক্যান্সার প্রতিরোধে বর্জনীয় খাবার:
* টিনজাত খাবার (যেমন- ফল, মাছ, কোমল পানীয় ইত্যাদি)
* লাল মাংস (গরু, ছাগল, ভেড়ার মাংস)
* সম্পৃক্ত চর্বিযুক্ত খাবার (গরু, খাসীর চর্বি)
* প্রক্রিয়াজাত মাংস (সসেজ, হটডগ ইত্যাদি নামে পরিচিত)।
* অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার।
* মিহি সাদা ময়দা।
* পরিশোধিত এবং কৃত্রিম চিনি।
* হাইড্রোজেনেটড তেল (মার্জারিন মাখন)।
* ধোঁয়াযুক্ত খাবার (মাছ, মাংস) বা স্নোকড্ খাবার।
* মাইক্রোওয়েভ ওভেনে প্রস্তুতকৃত খাবার বা গরম করা খাবার।
ক্যান্সার প্রতিরোধে করণীয়:
জীবন যাপনের মান পরিবর্তনের মাধ্যমে আমরা ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থেকে নিজেদের দূরে রাখতে পারি। নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো:
* ধূমপান করা থেকে বিরত থাকুন।
* পান-জর্দা, গুল, সাদা পাতার ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
* নিয়মিত শাকসবজি, তাজা ফলমূল ও আঁশজাতীয় খাদ্যগ্রহণের অভ্যাস গড়ে তুলুন।
* নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রমের অভ্যাস গড়ে তুলুন।
* শরীরের অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখুন।
* অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস যেমন- অধিক চর্বিযুক্ত, চিনিযুক্ত, লবণযুক্ত খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন।
* অন্তত ১ বছর মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন, এতে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
* যে সকল ক্যান্সারের প্রতিরোধক আছে তা গ্রহণ করুন।
* মদ্যপান থেকে বিরত থাকুন।
* নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা বা স্ক্রিনিং করুন।
তরমুজে রয়েছে লাইকোপেন একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে।
* আঙ্গুর
এতে রয়েছে রেসভিরাট্রল (Resveratrol)নামে শাক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস যা অ্যান্টি ক্যান্সার উপাদান হিসেবে কাজ করে।
* পেয়ারাঃ
এতে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস লাইকোপেন যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে।
* নাশপতিঃ
এতে রয়েছে কুয়ারসেটিন (Quercetin)একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
* পাঁকা পেঁপেঃ
এতে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
* স্ট্রবেরী
৩. রান্নায় ব্যবহৃত উপাদান (মসলা)
* পেয়াজ
* আদা
* রসুন
* হলূদ
* গোলমরিচ
* লবঙ্গ
* মেথি
* কালো জিরা
* তুলসি পাতা
৪. অন্যান্য খাবার
* ডাল (মসুর, মুগ ডাল ইত্যাদি)
* রাজমার দানা (কিডনী বিনস)
* কাঠ বাদাম, আখরোট
* ব্রাউন রাইস
* ওটস
* বিভিন্ন ধরনের বীজ
৫. পানি:
* দৈনিক কমপক্ষে ১০ থেকে ১২ গ্লাস পানি পান করতে হবে।
ক্যান্সার প্রতিরোধে বর্জনীয় খাবার:
* টিনজাত খাবার (যেমন- ফল, মাছ, কোমল পানীয় ইত্যাদি)
* লাল মাংস (গরু, ছাগল, ভেড়ার মাংস)
* সম্পৃক্ত চর্বিযুক্ত খাবার (গরু, খাসীর চর্বি)
* প্রক্রিয়াজাত মাংস (সসেজ, হটডগ ইত্যাদি নামে পরিচিত)।
* অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার।
* মিহি সাদা ময়দা।
* পরিশোধিত এবং কৃত্রিম চিনি।
* হাইড্রোজেনেটড তেল (মার্জারিন মাখন)।
* ধোঁয়াযুক্ত খাবার (মাছ, মাংস) বা স্নোকড্ খাবার।
* মাইক্রোওয়েভ ওভেনে প্রস্তুতকৃত খাবার বা গরম করা খাবার।
ক্যান্সার প্রতিরোধে করণীয়:
জীবন যাপনের মান পরিবর্তনের মাধ্যমে আমরা ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থেকে নিজেদের দূরে রাখতে পারি। নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো:
* ধূমপান করা থেকে বিরত থাকুন।
* পান-জর্দা, গুল, সাদা পাতার ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
* নিয়মিত শাকসবজি, তাজা ফলমূল ও আঁশজাতীয় খাদ্যগ্রহণের অভ্যাস গড়ে তুলুন।
* নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রমের অভ্যাস গড়ে তুলুন।
* শরীরের অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখুন।
* অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস যেমন- অধিক চর্বিযুক্ত, চিনিযুক্ত, লবণযুক্ত খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন।
* অন্তত ১ বছর মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন, এতে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
* যে সকল ক্যান্সারের প্রতিরোধক আছে তা গ্রহণ করুন।
* মদ্যপান থেকে বিরত থাকুন।
* নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা বা স্ক্রিনিং করুন।
লেখক : ডা. ফারজানা আক্ তার
এমবিবিএস,এমএসসি ( নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড সায়েন্স)
প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউদ্দিন হেলথ এন্ড নিউট্রিশন একাডেমি
কনসালটেন্ট নিউট্রিশন স্লিম অ্যান্ড বোল্ড
এমবিবিএস,এমএসসি ( নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড সায়েন্স)
প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউদ্দিন হেলথ এন্ড নিউট্রিশন একাডেমি
কনসালটেন্ট নিউট্রিশন স্লিম অ্যান্ড বোল্ড
সিটিচজেনটাইমস্/অহ/এমই