English

বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা এবং আজকের বাংলাদেশ

বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা এবং আজকের বাংলাদেশ
মতামত
একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে শেখ হাসিনার অবদান আজ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। ইতোমধ্যে তিনি শান্তি, গণতন্ত্র, স্বাস্থ্য ও শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার, দারিদ্র্য বিমোচন, উন্নয়ন এবং দেশে দেশে জাতিতে জাতিতে সৌভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার জন্য ভূষিত হয়েছেন মর্যাদাপূর্ণ অসংখ্য পদক, পুরস্কার আর স্বীকৃতিতে। তাহলে নির্দ্বিধায় বলা যায়, শেখ হাসিনার হাত ধরেই বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে এক বিস্ময় বিশ্ববাসীর কাছে। বর্তমানে বিদেশিরাও বাংলাদেশের সাফল্যের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করছেন। দেশে ও দেশের বাইরে ভিশনারি লিডার হিসেবে শেখ হাসিনার যে ঈর্ষণীয় সাফল্য তা এক কথায় অসাধারণ। অতীতে নানা সমস্যায় জর্জরিত দেশটি আজ অনেকটাই বদলে গেছে। মাথাপিছু জিডিপি বেড়েছে আটগুণ। নারীদের গড়ে সন্তান সংখ্যা দুজন। অর্থাৎ প্রতিটি সন্তানের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও তাদের ভাল রাখতে বাবা-মা এখন আরও বেশি ব্যয় করতে পারেন। ব্যাংকগুলোর কাছে শিল্প খাতে বিনিয়োগের মতো সঞ্চয়ও বেড়েছে। দেশের উন্নয়নে প্রথম ভূমিকায় রয়েছে, দেশটির টেক্সটাইল শিল্প, যার রফতানি ১৯৮৪ সালে ৩২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে আজ ৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে। ২০২০ সালে বাংলাদেশ ৫৪টি আফ্রিকান দেশের সম্মিলিত পোশাক রফতানি আয়ের তুলনায় দ্বিগুণ আয় করেছে। দ্বিতীয়টি হলো রেমিটেন্স। বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশীরা গত বছর ২২ বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠিয়েছে। তৃতীয়ত, ব্র্যাক এবং গ্রামীণ ব্যাংকের মতো বেসরকারী সংস্থার ভূমিকা, যারা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে সহায়তার মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান করে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বের শীর্ষ ক্রেডিট রেটিং সংস্থা মুডিস ইনভেস্টরস সার্ভিস বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সংস্থাটি বলেছে, বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে বিশ্বের অধিকাংশ দেশের মতো বাংলাদেশেরও অর্থনীতি- তে কিছুটা চাপ থাকলেও তা কোন ঝুঁকির কারণ নয়।

মহামারী করোনাভাইরাসের ধকল বৈশ্বিক অর্থনীতিকে দিগুণ মাত্রায় শ্লথ করেছে। গত ছয় মাস ধরে চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এই যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সঙ্কট। এমন বাস্তবতায় আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে থাকা দক্ষিণ এশীয় দেশ শ্রীলঙ্কা এরই মধ্যে দেউলিয়া হয়েছে। আরেক দেশ পাকিস্তানেও ঘনীভূত হচ্ছে সঙ্কট। সেই বিচারে বাংলাদেশ ঝুঁকিমুক্ত বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। মুডিসের সিঙ্গাপুর শাখার রাষ্ট্রীয় (বিনিয়োগ) বিশ্লেষক ক্যামিলে শ্যঁতা বলছেন, বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সম্প্রতি উচ্চস্তর থেকে নেমে এলেও বাহ্যিক দুর্বলতার সূচকে বাংলাদেশ ঝুঁকিমুক্ত। ২০০৭-২০০৮ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপির আকার ছিল ৯১.৬ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে তা বেড়ে ৪১৬ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে মাথাপিছু জাতীয় আয় ছিল ৬৮৬ মার্কিন ডলার। বর্তমানে তা বেড়ে ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলার হয়েছে। শুধু তাই নয়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ৩ হাজার ৭ মার্কিন ডলারে গিয়ে ঠেকবে। বিএনপি সরকারের সময় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ মাত্র তিন বিলিয়নের কিছু ওপরে ছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তা ৫ বিলিয়নের ওপরে এবং সেটাকে ৪৮ বিলিয়নে দাঁড় করিয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার। দেশে দারিদ্র্যের হার যেখানে ৪০ শতাংশের ওপরে ছিল, সফল রাষ্ট্রনায়ক জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তা এখন নেমে এসেছে ২০ শতাংশে। ২০০৯ সালে মাত্র ৪৭ শতাংশ মানুষ বিদ্যুতের আওতায় ছিল, মুজিব বর্ষে তা শতভাগ হয়েছে। দেশ এখন খাদ্যে প্রায় স্বয়ং সম্পূর্ণ। ইতোমধ্যে খাদ্য উৎপাদন ১.১ কোটি টন থেকে প্রায় ৪.০ কোটি টনে বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়েছে। অতি অল্প সময়ে উন্নয়নমূলক কার্যক্রম, মাথাপিছু আয়বৃদ্ধি, উচ্চ প্রবৃদ্ধিসহ উন্নয়নের সব সূচকে বর্তমান সরকার যেভাবে বিজয়ের কেতন উড়িয়েছেন, পৃথিবীর আর কোন রাষ্ট্র এমন করতে পেরেছে কিনা জানা নেই।এক দশক আগেও বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ১ হাজার ডলারের কিছু বেশি ছিল। সেখানে গত বছর সেটা বেড়ে ২ হাজার ৬০০ ডলারে দাঁড়িয়েছে,যা আরো অনেক দেশ থেকে বেশি।  

সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের যত ধাপ রয়েছে, বাংলাদেশ একের পর এক তো অতিক্রম করে চলছে। দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে মেগা প্রকল্প। স্বপ্নের পদ্মা সেতু আজ পদ্মার বুক চিরে দৃশ্যমান। নগরজুড়ে অনুরণিত হচ্ছে মেট্রোরেলের প্রতিধ্বনি। অন্তরীক্ষে শোভা পাচ্ছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট। ভারত-মিয়ানমারের সঙ্গে লড়াই করে এসেছে সমুদ্র বিজয়। জল-স্থল-অন্তরীক্ষের পর পাতালে হচ্ছে বিশাল উন্নয়ন যজ্ঞ। পাতালরেলও তাই আশা জাগাচ্ছে দেশকে। কর্ণফুলী টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেস- ওয়ে, চার লেনের সড়ক, পায়রা সমুদ্রবন্দর, সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র ও ২ ডজনের অধিক হাইটেক পার্কসহ দেশজুড়ে আজ চলছে এক বিশাল নির্মাণযজ্ঞ। আর এই যজ্ঞের প্রধান পুরোহিত বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যিনি তাঁর পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে যাচ্ছেন সোনার বাংলা তৈরির স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে। ১৯৭২ সালে ৭.৫ কোটি মানুষের মধ্যে ৬.০ কোটি ছিলেন দারিদ্র্যসীমার নিচে। করোনা-পূর্ববর্তী ২০২০-২১ সময়ে ১৬.৫০ কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশে দরিদ্র লোকের সংখ্যা ছিল ৩.১ কোটি। বাংলাদেশের জনগণের গড় আয়ুষ্কাল ৪৩ বছর থেকে বেড়ে এখন ৭২। শিশুমৃত্যুর হার হাজারে প্রায় ২০০ থেকে ৩০-এর নিচে নামানো সম্ভব হয়েছে। ১৯৭২ সালের ৭৮৬ কোটি টাকার বাজেট এখন ৬০৩৬৮১ কোটি টাকায় বৃদ্ধি পেয়েছে।গড় আয়ু, দেশের মানুষের স্বাস্থ্য ও শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রয়েছে। জনবহুল দেশ হওয়ার পরও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে দেশের সাফল্য উল্লেখযোগ্য। দেশের মানুষ এখন শিক্ষিত হয়েছে। সচেতনতা বেড়েছে। আমাদের দেশে মোট প্রজনন হার ২ দশমিক ০৪ শতাংশ, প্রতি হাজারে মাতৃমৃত্যুর হার ১ দশমিক ৬৩ শতাংশ। ১৫ বছর ও তদুর্ধ জনসংখ্যার শিক্ষার হার ৭৫ দশমিক ৬ শতাংশ, ৭ বছর ও তদুর্ধ জনসংখ্যার শিক্ষার হার ৭৫ দশমিক ২ শতাংশ, ৭ বছর ও তদুর্ধ নারী শিক্ষার হার ৭২ দশমিক ৯ শতাংশ। দেশের ১৫ বছর ও তদুর্ধ জনসংখ্যার ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর হার ৪৩ দশমিক ৫ শতাংশ।

প্রায় তিন দশক আগে নিজের জীবন-সংগ্রামের বর্ণনা দিতে গিয়ে নিজের ওরা টোকাই কেন গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুর কন্যা লিখেছিলেন, আমার চলার পথটি কখনোই সহজ নয়। বহু চড়াই-উতরাই পার হতে হচ্ছে। নানা সমস্যা চোখে পড়ে। দুঃখ-দারিদ্র্যক্লিষ্ট আমাদের সমাজ জীবনের এই দিকগুলো সবাই চিন্তা করুক। সমাজ ও দেশ উন্নয়নের কাজে রাজনৈতিক ও মানবিক চেতনায় সবাই উজ্জীবিত হয়ে উঠুক, এটাই আমার একমাত্র আকাক্সক্ষা। ১৯৭৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর জাতির উদ্দেশে দেয়া এক ভাষণে জাতির পিতা বলেছিলেন, সুখী ও সমৃদ্ধিশালী দেশ গড়তে হলে দেশবাসীকে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়াতে হবে। কিন্তু একটি কথা ভুলে গেলে চলবে না-চরিত্রের পরিবর্তন না হলে এই অভাগা দেশের ভাগ্য ফেরানো যাবে কি না সন্দেহ। বঙ্গবন্ধুর সেই কথা তাঁর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ঠিকই অক্ষরে অক্ষরে অনুধাবন করেছেন। তাই স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি ও আত্মপ্রবঞ্চনার উর্ধে থেকে পরিশ্রম দিয়ে সর্বজনকে নিয়ে তিনি আজ বিজয়িনী। ১৯৭১ এ বাঙালী জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান যে জাতির পরিচয় দিয়েছিলেন, ভিত্তি রচনা করেছিলেন, আজ স্বাধীনতার ৫১ বছর পর এক সুবর্ণলগ্নে সেই জাতিকে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর শক্তি দিয়েছেন তাঁরই যোগ্য উত্তরসূরি। পিতার অসমাপ্ত কাব্যকে তিনি পরম মমতায় নিজ হাতে সমাপ্ত করে যাচ্ছেন। নেতৃত্বের সবচেয়ে বড় সাফল্য হলো মানুষের জীবনমানের উন্নতি ও উন্নয়ন। ফায়ারস্টোনের এই কথাটিই প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা অন্যভাবে বলে থাকেন। তাঁর ভাষায়, আমার কাছে ক্ষমতা মানেই হচ্ছে জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন করা। জনগণের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করা। মাত্র এক যুগের ব্যবধানে বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়া, অর্থনীতিতে দ্রুত বর্ধনশীল পাঁচ দেশের তালিকায় জায়গা করে নেয়া, দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা, এমডিজি অর্জন, এসডিজি বাস্তবায়ন, পদ্মা সেতু নির্মাণ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুকেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, ঢাকা মেট্রোরেল, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী টানেল এবং ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণসহ দেশের মেগা প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়ন সবই প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী  নেতৃত্বের সুফল।

এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শিতায় গোটা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। ষাটের দশক থেকে দেশের মানুষ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কথা শুনে এলেও বাংলাদেশ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের যুগে প্রবেশ করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে ২০১০ সালে। পাবনার ঈশ্বরদীতে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল ১ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে ২০২৪ সালে।শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়নই নয়, সাধারণ মানুষের জীবনের মান উন্নয়ন, তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ, অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষকে সামাজিক বেষ্টনীর আওতায় আনতে তাঁর গৃহীত সকল কর্মসূচি আজ দেশি ও আন্তর্জাতিক বিশ্বে স্বীকৃত। দেশকে দারিদ্র সীমার নিচে নামিয়ে আনা এবং নারীর ক্ষমতায়নে ও বিশ্বে রেকর্ড গড়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মিয়ানমারে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে মানবিক আশ্রয় দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বিশ্ব মানবতার জননী। সবশেষ তথ্যমতে, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকারে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে এই অবস্থান দ্বিতীয়। একমাত্র ভারতই বাংলাদেশের ওপরে রয়েছে। সম্প্রতি কানাডাভিত্তিক সংবাদ প্রতিষ্ঠান ভিজুয়াল ক্যাপিটালিস্ট আইএমএফের তথ্যের আলোকে করা জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে। ১০৪ ট্রিলিয়ন ডলারের বৈশ্বিক জিডিপির ভিত্তিতে ১৯১টি দেশের তালিকা প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জিডিপির আকার ৩৯৭ বিলিয়ন বা ৩৯ হাজার ৭০০ কোটি ডলার। জিডিপির ভিত্তিতে শীর্ষ ৫০-এ দক্ষিণ এশিয়ার আর কোন দেশ নেই তাছাড়া পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে বাংলাদেশ নতুন এক উন্নয়ন যাত্রার পথে হাঁটতে শুরু করল। সেতুটি চালু হওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের দীর্ঘদিনের যাতায়াত দুর্ভোগ লাঘব হবে। ইতোমধ্যে বৈশিষ্ট্যের কারণে সেতুটি নজরে এসেছে বিশ্ববাসীর কাছে।

একুশ শতাব্দীতে বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানো মূলত সেখান থেকেই শুরু। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, লিঙ্গ সমতা, কৃষি, দারিদ্র্যসীমা হ্রাস, গড় আয়ুবৃদ্ধি, রফতানিমুখী শিল্পায়ন, তথ্যপ্রযুক্তি, বিদ্যুত, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, পোশাকশিল্প, ওষুধশিল্প, রফতানি আয়বৃদ্ধিসহ নানা অর্থনৈতিক সূচকে দেশ যেভাবে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে; তাতে সহজেই অনুমেয়- আগামীতে বাংলাদেশ ২০৪১ সালের আগেই উন্নত দেশের সারিতে নাম লেখাতে সক্ষম হবে।এছাড়া দীর্ঘমেয়াদি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে সর্বনিম্ন ১০০ বছরের স্থায়িত্বের জন্য পদ্মা সেতুকে বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে। সে কারণে এ সেতুতে ব্যবহৃত হয়েছে বিশ্বের এযাবৎকালের সর্ব দীর্ঘ পাইল। ভূমিকম্প ক্ষতি রোধে ব্যবহৃত হয়েছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ফিকশন পেন্ডুলাম বেয়ারিং।আলোর ব্যবস্থা হিসেবে এ সেতুতে আছে সর্বমোট ৪১৫ টি ল্যাম্পপোস্ট। সর্বাধুনিক সব সুবিধা সংবলিত খরস্রোতা পদ্মা নদীর ওপর স্বপ্নের এ পদ্মা সেতু তৈরি করতে সর্বমোট অর্থ ব্যয় হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। যার পুরোটাই বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে। নব্বই-এর দশকে চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করা বাংলাদেশকে এখন বিশ্বের রোল মডেল আখ্যা দিয়ে গত ২৮ জুলাই বাংলাদেশ উন্নয়ন সম্পর্কে অন্যদের যা শেখাতে পারে’ শীর্ষক এক নিবন্ধ প্রকাশ করেছে বিশ্বখ্যাত দ্য ফিন্যান্সিয়াল টাইমস।১৯৭১ সালে যে দেশে প্রতি পাঁচজনের একজন শিশু পাঁচ বছর পূর্ণ করার আগে মারা যেত, বর্তমানে সেই হার এখন ৩০ জনের মধ্যে একজনে নেমে এসেছে। যদি আরও বড় পরিসরে দেখা হয়, তবে হেনরি কিসিঞ্জারের তলাবিহীন ঝুড়ি আখ্যা পাওয়া দেশটি এখন উন্নয়নের সফল এক দৃষ্টান্ত।


লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট ।

সিটিজেন টাইমস্/এমই