এস,এস আকাশ, ফরিদপুর:
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার জেলা প্রশাসনের বেসার মান উন্নয়নে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করে আলোচিত হয়ে উঠছেন। এই জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার জেলার মধুখালীর জাহাপুর ইউনিয়নের আড়ুয়াকান্দী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষে মিথ্যা অপবাদে নির্যাতনের শিকার বাবা-ছেলের অবস্থার বিষয়ে তদন্তপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে আলোচনায় আসেন। এছাড়াও তিনি ফরিদপুরে যোগদান করার পর গত ২৩ মার্চ শেখ জামাল স্টেডিয়ামে ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ ইংরেজী, স্প্যানিশ, ফান্স, জাপানি, চাইনিজ, হিন্দি ও আরবিসহ সাতটি (বিদেশী ভাষায়) উপস্থাপনের আয়োজন করেন এবং ভাষণ উৎসবের পুরস্কার বিতরণ করেন তিনি। তার এই ব্যতিক্রমধর্মী এ আয়োজনে অভিভুত ফরিদপুরবাসী। ব্যতিক্রম এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পেরে খুবই আনন্দিত হয়ে জেলা প্রশাসকের প্রশংসা করেন। ব্যতিক্রমী এ আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
জেলা প্রশাসকের বিশেষ উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে, “আমার সন্তান জাতির সম্পদ” এই প্রতিপাদ্যকে উপজীব্য করে অভিভাবক সমাবেশ। শিক্ষকরাই জাতি গড়ার ম‚ল্য কারিগর প্রতিপাদ্য নিয়ে শিক্ষক সমাবেশ। শিক্ষার্থীদের ডাটাবেজ। ৭ মার্চের ভাষণ প্রতিযোগিতা। আশ্রায়ণ প্রকল্প ও আশ্রায়ণ শুমারি। স্পট ডিলিং লাইনেন্স বিতরণ। অভিবাসী ও প্রবাসী শুমারি।
এছাড়াও বেদে শুমারি। ১০০ জন অংশীজনের সমন্বয়ে আযোজিত বিতর্ক বিষয়ক প্রশিক্ষণ। ট্রান্সফরমার চুরি রোধ করতে স্মার্ট ডিভাইস। জাতীয় দিবস সৃমহের সফল উদযাপন । জসীম মেলা, অমর একুশে বই মেলা, বিসিক উদ্যোক্তা মেলার সফল আয়োজন। চরমপন্থীদের পুনর্বাসন। মাদকাসক্ত নিরাময় ও পুনর্বাসন। স্মার্ট বাংলাদেশের সকল সুবিদা, স্মার্ট ডিস্ট্রিক্ট ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ কর্মশালা ইত্যাদি কর্মসূচি জেলার সকল শ্রেণীর মধ্যে সাড়া ফেলেছে।
উল্লেখ্য, শনিবার জেলার মধুখালীর রায়পুর ইউনিয়নের মাঝকান্দিতে নির্যাতনের শিকার ইয়ামিন মৃধা ও তার পরিবারের বসবাসের ভাড়া বাসায় গিয়ে ইয়ামিন মৃধা ও তার পরিবারকে ফুলের শুভেচ্ছা জানানোসহ তাদের নগদ ২০ হাজার টাকা আর্থিক সাহায্য ও চাল, ডাল, তেল, লবনসহ বেশকিছু ফলম‚ল উপহার তুলে দেন। এ সময় জেলা প্রশাসক তাদের দুরাবস্থার খবর জানতে পেরে তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন এবং সেই সাথে তাদেরকে আশ্রায়ণ প্রকল্পে দুই শতাংশ জমিসহ ঘর প্রদানের ব্যবস্থা করে দেন।
তিনি ইয়ামিন মৃধার সন্তানদের পড়াশুনার দ্বায়িত্ব গ্রহণেরও আশ্বাস দেন। এছাড়াও তিনি মধুখালীতে অগ্নিকাÐে ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচটি পরিবারকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে নিয়েছেন। উপজেলার কামারখালি ইউনিয়নের মসনদপুরে আগুনে পুড়ে পাঁচটি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের খোঁজ খবর নিতে গত সোমবার বিকেল সাড়ে তিনটায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচটি পরিবারের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন এবং পুনরায় বাড়ি নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় সাহায্য সহযোগিতা করতে মধুখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নির্দেশনা প্রদান করেন। এভাবেই তিনি ফরিদপুর বাসীর কাছে খ্যাতি লাভ করেছেন।
এর আগে জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার পিএএ ফরিদপুর সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের ২৯ ইঞ্চি উচ্চতাসম্পন্ন নাইমা সুলতানা পাখি নামের একটি শিক্ষার্থীকে একটি ল্যাপটপ উপহার দেন এবং তার পড়াশোনার বিষয়ে খোঁজ-খবর নেন। নাইমা সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজের অনার্স (বাংলা) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। কম্পিউটার প্রশিক্ষণ এর জন্য একটি কম্পিউটার প্রয়োজন বলে পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে তাকে এ উপহার দেওয়া হয়।
ফরিদপুর সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ইউনিয়নের ইজা দুর্গাপুর গ্রামের বিল্লাল মৃধার কৃতি সন্তান অদম্য মেধাবী সালমান মৃধা (১৬)। সালমানের বাবা মো. বিল্লাল মৃধা অন্যের জমিতে কাজ করে যা পান তা দিয়েই কোনোমতে তাদের সংসার চলে। সালমান অন্যের জমিতে এবং রাজমিস্ত্রীর শ্রমিকের কাজ করে সংসারের খরচ বহনের পাশাপাশি চালিয়ে গেছে পড়াশোনা। এসএসসির ফলাফল প্রকাশের পর সালমানের কলেজে ভর্তি ও পড়ালেখার খরচ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিলে জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার পড়ালেখা করার সুযোগ করে দেন। তিনি সালমান ও তার ছোট ভাইয়ের পড়ালেখার ব্যয়ভার বহনের জন্য জেলা প্রশাসন স্কুল এন্ড কলেজে খন্ডকালীন অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ প্রদান করেন। এ চাকরির সুযোগে সালমান পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের ও পরিবারের প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহ করতে পারছে। এছাড়া, সালমানের ছোট ভাইয়ের লেখাপড়া নির্বিঘœ করতে স্কুল ড্রেস তৈরি করিয়ে দেয়াসহ সার্বিক বিষয়ে সহযোগিতা করেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক।
রিক্সা চালক হায়দার আলী ফকির তিনি রিক্সা চালিয়ে কষ্ট করে তিন সন্তানকে লেখাপড়া করাচ্ছেন। বড় দুই সন্তান মাস্টার্স অধ্যয়নরত, ছোট সন্তান এসএসসি পরীক্ষার্থী। হায়দার আলী ফকিরের একমাত্র সম্বল রিক্সাটি চুরি হয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে অসহায় হয়ে তিনি আসেন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে। তার অবস্থার কথা শুনে এই জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ কামরুল আহসান তালুকদার তাকে একটি রিক্সা উপহার দিয়ে জীবিকার ব্যবস্থা করে দেওয়ার সুধীজনের প্রশংসা ও দৃষ্টি কাড়েন তিনি।