নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকার মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক
জাহিদুল ইসলাম (টিপু) হত্যার সন্দেহভাজন মূল পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতা সুমন
শিকদার ওরফে মুসাকে দেশে ফিরিয়ে এনেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি)
গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৯ জুন) সকালে ঢাকার হযরত শাহজালাল
আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি ফ্লাইটে মুসাকে সঙ্গে নিয়ে অবতরণ করেন মতিঝিল ডিবির
একটি টিম। আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের মাধ্যমে ওমান থেকে মুসাকে ফিরিয়ে
আনা হয়।
টিপু হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন ও অভিযানের
নেতৃত্বদানকারী গোয়েন্দা মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) শাহিদুর
রহমান রিপন ওমান থেকে মুসাকে দেশে ফিরিয়ে আনার নেতৃত্ব দেন। তার সঙ্গে আরো ছিলেন
অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মো. রফিকুল ইসলাম ও পুলিশ সদরদপ্তরের এনসিবি বিভাগের
সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফয়েজ উদ্দীন।
এডিসি শাহিদুর রহমান রিপন বলেন, ইন্টারপোলের
সহযোগিতায় বাংলাদেশ পুলিশ দুবাই পুলিশের মাধ্যমে মুসাকে আটকের চেষ্টা শুরু করে।
বিষয়টি টের পেয়ে দুবাই থেকে ওমানে চলে যান তিনি। পরে ওমান পুলিশের মাধ্যমে মুসাকে
শনাক্ত করে আইনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তাকে দেশে ফেরত আনা হয়।
তিনি বলেন,
আলোচিত এই হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত
১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে তিনজন আদালতে ১৬৪ ধায়ার স্বীকারোক্তিমূলক
জবানবন্দি দিয়েছেন। তাদের মধ্যে শুটার মাসুমের জবানবন্দিতে হত্যার পরিকল্পনায়
মুসার নাম আসে।টিপু হত্যা মিশনের সব ঠিকঠাক করে গত ১২ মার্চ বাংলাদেশ ত্যাগ
করেছিলেন মুসা। আন্ডারওয়ার্ল্ডে তিনি শুটার মুসা নামে পরিচিত। জোড়া খুনের তদন্তে
তার নাম আসার পরই নড়েচড়ে বসেছিলেন গোয়েন্দারা।
কিলিং অপারেশনের ১২ দিন আগে শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক
বিমানবন্দর হয়ে পালান মুসা। এরপর বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে তাকে বিদেশ থেকে
ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। মুসা প্রথমে দুবাই গেলেও পরে সেখান থেকে ওমান পালিয়ে
যান। এরপর ওমানের সঙ্গে ইন্টারপোলের মাধ্যমে যোগাযোগ শুরু করে বাংলাদেশ।
মুসার বিরুদ্ধে রাজধানীর মতিঝিল, মিরপুরের
পল্লবী থানাসহ বিভিন্ন থানায় হত্যা,
অস্ত্র মামলাসহ ১১টি মামলা রয়েছে।
তিনি ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী প্রকাশ-বিকাশ গ্রুপ ও মানিক গ্রুপের সদস্য। মতিঝিল
এজিবি কলোনিতে যুবলীগ নেতা রিজভী হাসান ওরফে বোঁচা বাবু হত্যা মামলার অন্যতম আসামি
সুমন শিকদার ওরফে মুসা। রিজভী হাসান হত্যা মামলার বাদী তার বাবা আবুল কালাম। এই
আবুল কালাম আবার জাহিদুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। রিজভী হত্যা মামলা
মিটমাটের জন্য সুমন শিকদারসহ আসামিরা জাহিদুলের কাছে গিয়ে ব্যর্থ হন।
তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ ও র্যাবের কর্মকর্তারা বলছেন, দলীয়
প্রতিপক্ষ জাহিদুলকে হত্যা করতে রিজভী হাসান হত্যা মামলার আসামিদের ব্যবহার করা
হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্যমতে, তিন-চার মাস আগে টিপু হত্যার
পরিকল্পনা করা হয়। এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিকাশ-প্রকাশ গ্রুপের অন্যতম সদস্য
মুসার সঙ্গে ১৫ লাখ টাকার চুক্তি করেন মতিঝিল ১০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ
সম্পাদক ওমর ফারুক। এর মধ্যে প্রথমে মুসাকে ৯ লাখ টাকা দেন তিনি। মার্চের ১২
তারিখে টাকা নিয়ে দুবাই চলে যান সুমন শিকদার ওরফে মুসা।