চেনা পথ নতুন করে পাড়ি দেওয়া। অনূর্ধ্ব-১৯ দলে বহুবার ২২ গজে একসঙ্গে দৌড়েছেন তাওহীদ হৃদয় ও শামীম পাটোয়ারি। দেশকে ম্যাচ জিতিয়েছেন। চ্যাম্পিয়ন করেছেন। এবার জাতীয় দলের হয়ে দলকে ম্যাচ জেতানোর দায়িত্ব সামলালেন তারা।
১৭তম ওভারে ফজলহক ফারুকির তৃতীয় বলে লেগ-অনে সজোরে উড়িয়ে মারেন তাওহীদ হৃদয়। এরপরই ধারাভাষ্যকারের মুখ থেকে বেরিয়ে এলো বাংলাদেশি দর্শকদের সেই মনের কথাটি। আগের ওভারেই স্লগ সুইপে মারা শামীম পাটোয়ারীর সহজ ক্যাচ ছেড়েছিলেন নাজিবুল্লাহ জাদরান। সেই ক্যাচ মিস যেন বাংলাদেশের জয়েরই ইঙ্গিত! কিন্তু শেষ ওভারে করিম জানাতের হ্যাটট্রিক। সহজ ম্যাচটি হয়ে পড়ল পাহাড়সম কঠিন। সেই পাহাড় ভাঙল শরীফুলের হাঁকানো চারে। টাইগাররাও নাটকীয় ম্যাচটি জিতল ২ উইকেটে।
হৃদয়ের সেই ছয়ের পর পঞ্চম বলে শুয়ে পড়ে স্কুপ করে চার মেরেছিলেন শামীম। ফারুকির স্লোয়ার পড়েছেন দারুণভাবে। শেষ বলে হয়তো সিঙ্গেলই হতো, তবে হৃদয়-শামীমের দুর্দান্ত রানিংয়ে সেটিই হয়েছে দুই। জয়ের বন্দর তখন খুব নিকটে। কিন্তু এরপরই শামীমের উইকেটে আঘাত রশিদ খানের। দুর্দান্ত খেলতে থাকা শামীমকে ৩৩ রানে (২৫ বল) ফিরিয়েছেন এই লেগ-স্পিনার।
শেষ ওভারে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল মাত্র ৬ রান। এরই মধ্যে ওভারের কোটা পূরণ করে ফেলেছিলেন রশিদ-মুজিব ও ফারুকিরা। তাই তো শেষ ওভারে আক্রমণে আসেন করিম জানাত। তার করা প্রথম বলেই অফ-স্টাম্পের বাইরের বলকে চারে পরিণত করেন মেহেদী মিরাজ। এরপরই নাটকীয়তা, মাত্র ২ রানের বাধা পেরোতেও তিনি যেন তাড়াহুড়োই করলেন। এরপর ওয়াইড বলে ব্যাটের কানা লাগিয়ে কট বিহাইন্ড তাসকিন আহমেদ। অপর পাশে অসহায় দৃষ্টি হৃদয়ের। এরপর? জানাতের শট বলকে পেছনে উড়িয়ে মারতে গিয়ে থার্ডম্যানের হাতে ধরা নাসুম। যেন না চাইতেই অসতর্ক বাংলাদেশি ক্রিকেটাররা জানাতকে হ্যাটট্রিক উপহার দিয়েছেন!
এরপর ভারতের মাটিতে হওয়া ১ রানের হারের ক্ষত জেগে ওঠে। শঙ্কা জেগেছিল আবারও সেই দুঃসহনীয় স্বপ্ন ফিরে আসে কিনা! তবে সেটি আর হয়নি। জানাতের পঞ্চম বলটি অফ-সাইডে ফাঁকা জায়গায় ফেলে সজোরে দৌড় শরীফুল-হৃদয়ের। ম্যাচটা এতদূর নিয়ে আসার পেছনে অবশ্য সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব হৃদয়ের। ফিফটি থেকে তিন রান দূরত্বে থাকা এই ব্যাটারই সতীর্থদের নিয়মিত বিরতিতে আসা-যাওয়া দেখেও উইকেটে অবিচল ছিলেন। শেষপর্যন্ত তিনি অপরাজিত ছিলেন ৩৩ বলে ৪৭ রানে।
এর আগে আফগানদের দেওয়া ১৫৫ রানের জবাবে প্রথম ওভারেই আঘাত পায় বাংলাদেশ। ফজলহক ফারুকির করা অফ-স্টাম্পের দিকে আসতে থাকা সোজা বল তিনি মিস করে গেছেন। আর তাতেই উড়ে গেল স্টাম্প, মাত্র এক ফরম্যাটে খেলার সুযোগ পেলেও কাজে লাগাতে পারছেন না রনি। তিনি ফিরেছেন মাত্র ৪ রানে (৫ বল)। এরপর অল্প সময়ের ব্যবধানে ফেরেন লিটন-শান্ত। মুজিবকে স্লগ সুইপে খেলতে গিয়ে বল তার পেটে-পিঠে লেগে এরপর স্টাম্প ভেঙে থামে। ১২ বলে তিনি ১৪ রান করেন। পরপরই ফেরেন লিটন। বুকের ওপরে ওঠে আসা বল মারতে গিয়ে ১৮ রানেই (১৯) তিনি তালুতে বন্দী।
এরপর বৃষ্টিতে ১৫ মিনিটের মতো ম্যাচটি বন্ধ ছিল। অল্প সময় পর খেলা শুরু হতেই আক্রমণাত্মক হতে গিয়ে আউট সাকিবও। ১৭ বলে ১৯ রান করা সাকিব উড়িয়ে মারতে গিয়ে বাউন্ডারিতে ধরা পড়েন। এরপরই হোঁচট খাওয়া স্বাগতিকদের পথ দেখান হৃদয়-শামীম জুটি। তাদের ৭৩ রানের জুটিই বাংলাদেশের জয়ের পথ সহজ করে তোলে। আফগানরা এদিন ৭ জন বোলার ব্যবহার করেছে। তাদের হয়ে সর্বোচ্চ তিন উইকেট পেয়েছেন জানাত।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে দ্রুত রান তোলার প্রতিযোগিতায় নামে সফরকারী দলটি। বাংলাদেশের চেয়ে ফরম্যাটটিতে পরিসংখ্যানে এগিয়ে থাকায় হয়তো তাদের বাড়তি আত্মবিশ্বাস ছিল। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারালেও এদিন দৃঢ়তা দেখিয়েছেন মোহাম্মদ নবি। তার ফিফটির সঙ্গে শেষদিকে আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের ১৮ বলে ৩৩ রানের ক্যামিও ভালো কাজ দিয়েছে। যার ফলে আফগানরা দেড়শ পেরোনো লড়াকু পুঁজি পায়।
বাংলাদেশের হয়ে এদিন সাকিব সর্বোচ্চ দুটি উইকেট নেন। এছাড়া মুস্তাফিজ, শরীফুল, নাসুম ও মিরাজ নিয়েছেন একটি করে উইকেট।