বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, 'এক-এগারোতে গ্রেপ্তার হওয়ার পরে কারা কারা পালিয়েছিল দেশ ছেড়ে এটা সবাই জানে।'
বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যবস্থাসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে সোমবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুরে যাত্রাবাড়ীতে পদযাত্রা শুরুর আগে তিনি এ কথা বলেন।
গতকাল রাজশাহীর জনসভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্যের প্রসঙ্গে টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'এক-এগারোতে গ্রেপ্তার হওয়ার পরে কারা কারা পালিয়েছিল দেশ ছেড়ে এটা সবাই জানে কিন্তু পালায়নি একজন, তিনি হলেন—দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তিনি পরিষ্কার করে বলেছিলেন, বিদেশে আমার কোনো জায়গা নেই। এই দেশ আমার, এই মাটি আমার। আমার জন্ম এখানে, মরলেও আমি এখানে মরবো।'
ফখরুল বলেন, 'আমাদের এই পদযাত্রা গণতন্ত্রের জয়যাত্রা। আমাদের এই পদযাত্রা, সভ্যতার জয়যাত্রা। আমাদের এই পদযাত্রা, মানুষের অধিকার আদায় করার জয়যাত্রা।'
তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগ এখন প্রমোদ গুনছে। তাদের পায়ের নিচে থেকে মাটি সরে গেছে। তারা প্রতিদিন জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। আজকে চালের দাম কত হয়েছে, জনগণের সামনে দাঁড়ায় কোন কথা বলে! ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াবে বলেছিল না? এখন কত খাচ্ছেন আপনারা? ডালের দাম, লবণের দাম, আটার দাম কত, ভাই? বহু গুণ বেড়ে গেছে।'
'পুরান ঢাকায় গ্যাস নাই। শুধু পুরান ঢাকায় না, গোটা বাংলাদেশেই এখন গ্যাস নাই। ওরা গ্যাসও খেয়ে ফেলেছে। বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। প্রত্যেকটি দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে। জনগণের পকেট থেকে সেই টাকা কেটে নেওয়া হচ্ছে। আর সেই টাকা তারা লুট করে বিদেশে পাচার করে দিচ্ছে,' বলেন ফখরুল।
আওয়ামী লীগের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'এখনো সময় আছে; আপনারা ১৪-১৫ বছর ধরে এই দেশের মানুষের ওপর যে অত্যাচার করেছেন, এই অত্যাচারে এই দেশের মানুষের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। আপনারা কোনো রাস্তা খুঁজে পাবেন না।'
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'নির্মলেন্দু গুণের একটি কবিতার আছে, সেটা বলতে চাই—কোন দিকে পালাবে তুমি। কোনো দিকে পালানোর পথ নাই, উত্তরে...পবর্তমালা, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। কোন দিকে পালাবে তুমি। তাই বলছি, এখনো সময় আছে। আমাদের যে ১০ দফা দাবি মানে মানে মেনে নিয়ে পদত্যাগ করুন। সংসদ বাতিল করুন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান আবার চালু করে নতুন নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে একটি নির্বাচন দিন, যে নির্বাচনে জনগণ অংশগ্রহণ করতে পারবে, ভোট দিতে পারবে।'
দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন জনগণ আর মানবে না মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, 'আপনাদের (আওয়ামী লীগ) হাতে ভোট নিরাপদ কেমন করে? এই যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আমাদের এমপি সাত্তার সাহেব ছিলেন, তিনি পদত্যাগ করলেন, তারপর যখন তিনি ভুল করে আবার নির্বাচন করতে গেলেন, তাকে আমরা বহিষ্কার করেছি। এখন তাকে জয়লাভ করানোর জন্য সব নীতি-নৈতিকতা বাদ দিয়ে আপনারা আপনাদের প্রার্থীকে প্রত্যাহার করেছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী আসিফকে দুদিন ধরে পাওয়া যাচ্ছে না; গুম। অর্থাৎ সাত্তারকে জেতানোর জন্য এখন আপনারা পুরো নির্বাচন ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছেন। এই তো আপনাদের নির্বাচনের ব্যবস্থা!'
'আপনারা মাগুরার কথা বলেন, মাগুরার দাদা বানিয়েছেন আপনারা ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে। সুতরাং এই সরকারের অধীনের কোনো হতে পারে না,' বলেন তিনি।
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও ১০ দফার দাবিতে রাজধানীতে চারদিনের পদযাত্রার আজ দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচিটি দুপুর আড়াইটায় শুরু হয়েছে। শ্যামপুরের জুরাইন রেল গেইটের কাছাকাছি গিয়ে শেষ হয়েছে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর পরিচালনায় এতে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। পদযাত্রায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা বরকতউল্লাহ বুলু, হাবিবুর রহমান হাবিব, আজিজুর বারী হেলাল, মীর সরফত আলী সপু, কামরুজ্জামান রতন, নবী উল্লাহ নবী, সাইফুল আলম নীরব, আব্দুল মোনায়েম মুন্না, মীর নেওয়াজ আলী, ইসহাক সরকার, হাবিবুর রশীদ হাবীব, রিয়াজ উদ্দীন নসু প্রমুখ।