English

চিকিৎসা বিজ্ঞানের মাইলফলক সোপান দাসের উদ্ভাবিত ডিভাইস

চিকিৎসা বিজ্ঞানের মাইলফলক সোপান দাসের উদ্ভাবিত ডিভাইস
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

তছলিমা খাতুন

মানব স্বাস্থ্য ভালো রাখতে রোগ নিরাময়, প্রতিষেধক ও প্রতিরোধে  চিকিৎসা বিজ্ঞানে নতুন নতুন আবিষ্কার ও প্রয়োজন অনুসারে বিভিন্ন ডিভাইস ব্যবহার করা হয়। বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখার মতো চিকিৎসা বিজ্ঞানেও যোগ হচ্ছে নিত্য নতুন আবিষ্কার। চিকিৎসা বিজ্ঞান ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে চলেছে। মানুষের কষ্ট লাঘব করতে বিজ্ঞানীরা রাত-দিন পরিশ্রম করছেন। করোনার কারণে সেটি আরও বেশি পরিলক্ষিত হয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের সর্বশেষ আবিষ্কার এ বছর বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার দেশের জন্য সম্মান বয়ে এনেছে। এদের মধ্যে কয়েকজন আন্তর্জাতিক পুরস্কারও পেয়েছেন। বাংলাদেশ তথা পৃথিবীকে তাক লাগিয়ে বিজ্ঞানের নতুন ইতিহাস গড়তে যাচ্ছেন এমন একজনের সম্পর্কে জানাতে চাই। ড. সোপান দাস। বাংলাদেশ পরমানু শক্তি কমিশন এ ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন তিনি।   

মানবদেহের ফুসফুসের ক্যান্সার প্রতিরোধে তার উদ্ভাবিত ডিভাইস পৃথিবীময় সাড়া ফেলবে। এটি বাতাসে দুইটি তেজস্ক্রিয় গ্যাস রেডন ও থোরন এর উপস্থিতি আলাদা ভাবে নির্ণয় করতে পারবে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। তার উদ্ভাবনী ডিভাইস নিয়ে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয়।

ডিভাইস সম্পর্কে তিনি জানান, বাংলাদেশ পরমানু শক্তি কমিশন এ  বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে ২০১২ সালে যোগদান করি। এর পূর্বে আমি পাবনা ক্যাডেট কলেজ এ পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত ছিলাম। ২০১৭ সালে দক্ষিণ কোরিয়াস্থ কোরিয়া এডভান্সড ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি (কেএআইএসটি) এ নিউক্লিয়ার এন্ড কোয়ান্টাম ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট এ জঈঅ-কঅওঝঞ স্কলারশীপ এর অধীনে মাস্টার্স প্রোগ্রামে এ গমন করি। ওই প্রোগ্রাম সফলতার সাথে শেষ করে একই  ডিপার্টমেন্ট এ পিএইচ ডি শুরু করি এবং ২০২২ সালে সফলতার সাথে ডিগ্রী সম্পন্ন করে দেশে প্রত্যাবর্তন করি। বাংলাদেশে আমি পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করি। এই ডিভাইস উদ্ভাবনের মাধ্যমে আমি পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করি। এই ডিভাইসটি বাতাসে দুইটি তেজস্ক্রিয় গ্যাস রেডন ও থোরন এর উপস্থিতি আলাদা ভাবে নির্ণয় করতে পারে। রেডন ও থোরন গ্যাসদ্বয় বাতাসে সবসময় উপস্থিত থাকে কিন্তু এর মাত্রা বিভিন্ন কারণে পরিবর্তন হতে পারে। এই গ্যাস দুটির কোন গন্ধ, বর্ণ বা স্বাদ নেই যে কারনে এদের উপস্থিতি ডিটেক্টর ছাড়া নির্ণয় অসম্ভব। এই দুইটি গ্যাস ফুসফুসের ক্যান্সার এর দ্বিতীয় কারণ। ফুসফুস ক্যান্সারের প্রধান কারণ হচ্ছে ধূমপান।  যেহেতু এই ডিভাইস টি বাতাসে ওই গ্যাস দুটির উপস্থিতি সনাক্ত করতে পারে, সেহেতু মানুষ তার বাড়িঘর ও কর্মস্থলে এদের উপস্থিতি পরিমাপ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী সতর্কতা অবলম্বন করে ফুসফুস ক্যান্সার এর সম্ভাবনা কমাতে পারবে।


এটি উদ্ভাবনের উপাদান: এটি একটি ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস তাই এটি তৈরিতে বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা হয়েছে। সরকারি বেসরকারিভাবে ডিটেক্টরের বিশাল সম্ভাবনাময় বাজার রয়েছে। এই উদ্ভাবনটির আগে বিপণন পাইলট প্রয়োজন। সমাধানটি দেশের বেসরকারি খাত এবং মানবিক সুবিধার জন্য বহুজাতিক কোম্পানির মনোযোগের দাবি রাখে। পূর্বের পর্যায়ে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি ছোট কোম্পানির সাথে পাইলটিং করার জন্য আমার  পিএইচডি থিসিসের সুপারভাইজার কাজ করেছেন যদিও বিপণনের জন্য এখনও অনেক কিছু করা বাকি আছে। আমি আশা করছি এ উদ্ভাবনের বাণিজ্যিক গুরুত্বের কথা শুনলে দেশের বেসরকারি খাত বা যেকোনো বৈশ্বিক কোম্পানি আগ্রহী হবে। এই ডিভাইসটির মূল্য সমমানের অন্য ডিভাইস এর তুলনায় অনেক কম। সমমানের অন্য ডিভাইস এর দাম প্রায় ৭ লাখ টাকার উপরে কিন্তু আমার ডিভাইসটির দাম ৫০ হাজার টাকার মত হবে।

বাংলাদেশ এবং সারা পৃথিবী নিয়ে আমার ভাবনা: এই মুহূর্তে উন্নয়নশীল দেশের মানুষ রেডন-সম্পর্কিত ফুসফুসের ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতন নয়। কিন্তু উন্নত দেশগুলিতে, তারা বাড়িতে রেডনের পরিমাণ পরীক্ষা করার জন্য ঘন ঘন রেডন ডিটেক্টর ব্যবহার করে। কিন্তু তারা থোরন গ্যাস সম্পর্কে সচেতন নয়। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, থোরনের ফুসফুসের ক্যান্সারের জন্য রেডনের মতো একই প্রভাব রয়েছে। যেহেতু এই ডিভাইসটি থোরন গ্যাস কে আলাদা ভাবে পরিমাপ করতে পারে, সেহেতু বাতাসে এর উপস্থিতি জানলে মানুষ এই তেজস্ক্রিয় গ্যাস সম্পর্কে অবহিত হতে পারবে এবং নিজেদেরকে নিরাপদ রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবে। যেহেতু এই ডিভাইসটির দাম কম, সেহেতু দেশে এবং বহির্বিশ্বে এর ব্যবহার বাড়বে এবং মানুষ কিছুটা হলেও ফুসফুসের ক্যান্সারের হাত থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারবে যদি তারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দিকনির্দেশনা অনুসরণ করে।  
আমার উদ্ভাবনী প্রযুক্তি অন্যদের থেকে আলাদা হওয়ার কারণ সর্বপ্রথম আমার ডিভাইসটির দাম সমমানের অন্য ডিভাইস এর তুলনায় অনেক কম। আমার ডিভাইস এর সনাক্তকরণ প্রক্রিয়া ও ডিজাইন অন্যান্য ডিভাইস এর তুলনায় আলাদা যার ফলে এর দক্ষতা অন্যদের তুলনায় বেশি।  

আমার এই ডিভাইসটিকে আন্তর্জাতিক মানের ল্যাবে আরো উন্নত করা সম্ভব হলে  এটি সারাবিশ্বে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোতেও ফুসফুসের ক্যান্সার এর রোগীর সংখ্যা কমাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারবে।