English

আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো ভোটেই যাবে না বিএনপি

আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো ভোটেই যাবে না বিএনপি
রাজনীতি

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অধীনে যে কোনো পর্যায়ের নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে অনড় রয়েছে বিএনপি। সে অনুযায়ী স্থানীয় সরকারের যে কোনো নির্বাচন বা উপনির্বাচনে দলের পক্ষ থেকে প্রার্থী দিচ্ছে না দলটি। এমনকি আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অধীনে অংশ না নেওয়ার বিষয়ে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন ঢাকা ও লন্ডনে অবস্থানরত দলের নীতিনির্ধারকরা। তাঁরা বলছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। দাবি আদায়ে রাজপথের আন্দোলনকেই পথ হিসেবে বেছে নিচ্ছেন তাঁরা। সে অনুয়াযী রূপরেখা তৈরি করছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। জানতে চাইলে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে যা হচ্ছে তাকে নির্বাচন বলা যায় না। এটা দেশে-বিদেশে স্বীকৃত। আমাদের বক্তব্য পরিষ্কার, বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাব না। আর আগামী জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ ব্যবস্থা ছাড়া আগামীতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে না। নিরপেক্ষ সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেই বিএনপিসহ সব দল নির্বাচনে অংশ নেবে। জানা যায়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অধীনে আর কোনো ভোটে না যাওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্তে অনড় বিএনপি। বিএনপি মনে করে, সুষ্ঠু নির্বাচনের পূর্বশর্ত নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার। তাদের সামনে এখন মূল চ্যালেঞ্জ নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশন কিংবা স্থানীয় প্রশাসন  দলীয় বৃত্তের বাইরে যেতে পারে না। এ কারণেই জাতীয় নির্বাচনের জন্য নির্দলীয় সরকারের দাবি। এ দাবিকে মূল এজেন্ডা হিসেবে সামনে রেখে নতুন ভাবে আন্দোলনের ছকও তৈরি করা হচ্ছে। এজন্য আটঘাট বেঁধেই মাঠে নামবে বিএনপি। দলের নির্বাহী কমিটির নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক সভায় নেতাদের মতামতের পাশাপাশি রাজপথে থাকার অঙ্গীকার নেওয়া হচ্ছে।

 

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু বলেন, আওয়ামী লীগের অধীনে ২০১৪ সালের নির্বাচনে ১৫৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। ওই সময় ভোট পড়ে মাত্র ২ থেকে ৫ শতাংশ। এরপর তাদের অধীনে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের আগের রাতেই আওয়ামী লীগ কেন্দ্র দখল করে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়। তাই আওয়ামী লীগের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কিংবা অন্য কোনো নির্বাচনে যাওয়া মানে তাদের অনৈতিক কাজকে বৈধতা দেওয়া। এজন্যই নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া আর কোনো ভোটে যাব না। দেশব্যাপী জনমত সৃষ্টি করে আন্দোলনের বিকল্প নেই।

 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দাবি আদায়ে আন্দোলনের সময় বা দিনক্ষণ, কৌশল চূড়ান্ত না হলেও অচিরেই এক দফা দাবিতে কর্মসূচিতে রাজপথে নামার পরিকল্পনায় এগোচ্ছে বিএনপি। সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে দল ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর ঢেলে সাজানোর উদ্যোগও সমাপ্তির পথে। তৃণমূলের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে এবার আন্দোলনের ধরন-কৌশলের ছক আঁকছে বিএনপি। জাতীয় সরকার নিয়ে কথা বললেও বিএনপির মূল লক্ষ্য নির্বাচনকালে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, আওয়ামী লীগের অধীনে পর পর দুটি সংসদ নির্বাচন, সব সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রমাণ হয়েছে তাদের অধীনে সুষ্ঠু ভোট সম্ভব নয়। তাই বিএনপি নেতা-কর্মীরা মনে করেন তাদের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদসহ কোনো নির্বাচনেই যাওয়া ঠিক হবে না।

জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল বলেন, সংগঠনকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ে যা যা দরকার স্বেচ্ছাবেবক দল সবই করবে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির হাইকমান্ড মনে করেন চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ সব রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর মুক্তি, সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবি আন্দোলনের মাধ্যমে আদায় করতে হবে। সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হবে না। নির্বাচনে ভোট গ্রহণের জন্য ইভিএম পদ্ধতিও গ্রহণযোগ্য হবে না।

জানা যায়, এ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেসব রাজনৈতিক দল যাবে না এবং ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে যারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির পক্ষে থাকবে সেই রাজনৈতিক দল বা জোটের সঙ্গে বন্ধন সংহত করা হবে। ইতোমধ্যে ভিতরে ভিতরে ২০-দলীয় জোট, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বাম দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোভাব জেনে নিয়েছেন বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। আগামী সপ্তাহেই আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা শুরু হবে। এর পরই চূড়ান্ত আন্দোলনে নামবে বিএনপি।