স্পোর্টস ডেস্ক
গত গ্রীষ্মে পুরো ফুটবলবিশ্বকে অবাক করে দিয়ে বার্সেলোনা
ছাড়েন লিওনেল মেসি। এরপর আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড যোগ দেন ফরাসি ক্লাব পিএসজিতে।
কিন্তু নতুন ঠিকানায় কিছুতেই নিজেকে মেলে ধরতে
পারছেন না তিনি। বরং ফরাসি সংস্কৃতির সঙ্গে এবং কোচ মাউরিসিও পচেত্তিনোর খেলার ধরনের
সঙ্গে খাপ খাওয়াতেই হিমশিম খাচ্ছেন সাতবারের ব্যালন ডি'অরজয়ী।  
দল হিসেবে মেসি আসার পর পিএসজিরও খুব একটা উন্নতি
হয়নি। ফরাসি লিগ ওয়ানের শিরোপা জিতলেও ফের একবার চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা জেতার স্বপ্ন
অধরা থেকে গেছে প্যারিসিয়ানদের। দলের পাশাপাশি মেসির নিজের পারফরম্যান্সেরও অবনতি হয়েছে।
বার্সেলোনার জার্সিতে তিনি যতটা সাবলীল ও প্রতিপক্ষের জন্য মূর্তিমান আতঙ্ক ছিলেন,
পিএসজিতে তার ছিটেফোঁটাও দেখা যাচ্ছে না।  
মেসির এই ফর্মহীনতার পেছনের কারণগুলো অনুসন্ধান
করেছে বার্সেলোনা-ভিত্তিক 'এমবিপি স্কুল অব কোচেস' নামে কোচদের প্রশিক্ষণের জন্য বিখ্যাত
এক প্রতিষ্ঠান। তাদের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে মূলত ৪টি কারণে মেসির এমন নিষ্প্রভ চেহারা।
এর মধ্যে, প্রথম কারণটি হলো- পিএসজির আক্রমণভাগে মেসির নতুন ভূমিকায় নামা। পচেত্তিনোর
ফরম্যাশনে মেসির ভূমিকা মূলত রাইট উইঙ্গারের। তবে মূলত প্লে-মেকার হিসেবেই তাকে ব্যবহার
করা হচ্ছে বেশি।
দলের আক্রমণের বিল্ড-আপে বেশি দায়িত্ব পালন করার
কারণে মেসির গোল করার হার কমে গেছে। অন্যদিকে বার্সায় তাকে ঘিরেই আক্রমণ সাজানো হতো।  
দ্বিতীয় কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে- মেসি যে মানের
খেলোয়াড় পিএসজি সেই মানের দল কি না সেই ব্যাপারটাকে। দল হিসেবে পিএসজি যেভাবে খেলে
অভ্যস্ত, বার্সার ধরন তার চেয়ে একেবারেই আলাদা। ফলে মেসির ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে
এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। যদিও পিএসজিতে বেশ কয়েকজন তারকা খেলোয়াড় আছেন এবং বল দখলেও
তারা প্রায়ই এগিয়ে থাকে। আর পিএসজির খেলার ধরন হলো ডিফেন্স থেকে আক্রমণে উঠে আসা।  
পিএসজির তিন তারকা ফরোয়ার্ড- কিলিয়ান এমবাপ্পে,
আনহেল দি মারিয়া ও নেইমার কাউন্টার অ্যাটাকে বেশ পারদর্শী। তাদের গতিও দুর্দান্ত। কিন্তু
বয়সের কারণে মেসির সেই ধার আর নেই। তাছাড়া বার্সার খেলার ধরন ছিল বল দখলে রেখে ধীরে
ধীরে আক্রমণে ওঠে আসা। তাদের পাসিং ফুটবলের ঠিক উল্টো পথে হাঁটে পিএসজি। এমবাপ্পেদের
গতিময় ফুটবলের সঙ্গে তাই খাপ খাওয়াতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে মেসিকে।  
আর তৃতীয় কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে পিএসজির খেলার
ধরনে এমবাপ্পের প্রভাব। ফরাসি ফরোয়ার্ডের দুরন্ত গতিময় ফুটবল পিএসজির এখনকার দলটির
মূল চালিকাশক্তি। এর আগে একইরকম প্রতিস্থিতি তৈরি হয়েছিল বার্সায় মেসি এবং নেইমার,
কিংবা রিয়াল মাদ্রিদে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ও করিম বেনজেমার ক্ষেত্রে। দলে যদি সেরা
ফর্মে থাকে, তাহলে তার ছায়ায় বাকিরা ঢাকা পড়ে যায়। এমনকি এ কারণে অনেক প্রতিভাধর খেলোয়াড়ের
সামর্থ্যও ঢাকা পড়ে যায়। নেইমার যেমন মেসির ছায়া থেকে বের হওয়ার লক্ষ্যে পিএসজিতে পাড়ি
জমিয়েছিলেন। তবে মেসি ধীরে ধীরে দলে নিজের ভূমিকা বুঝতে শুরু করেছেন। এই মৌসুমে ১৩টি
অ্যাসিস্ট যার প্রমাণ।
চতুর্থ ও শেষ কারণ বলে হচ্ছে, ফুটবলে যে বৈপ্লবিক
পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে; মেসির মতো 'বুড়ো' খেলোয়াড়দের জন্য তার সঙ্গে খাপ খাওয়ানো
বেশ কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফুটবল এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি শরীরী খেলা হয়ে উঠেছে। প্রচণ্ড
গতি আর আগ্রাসী ফুটবল খেলা এখন ৩৪ বছর বয়সী মেসির জন্য বেশ কঠিন। ফলে পিএসজির আক্রমণভাগে
তার ভূমিকা কমতে শুরু করছে। আগের মতো আক্রমণের কেন্দ্রস্থলে আর দেখা যাচ্ছে না তাকে।
সেই জায়গা দখল করে নিচ্ছেন এমবাপ্পে বা নেইমারের মতো তুলনামূলক তরুণ খেলোয়াড়রা।
নতুন ক্লাব, নতুন পরিবেশ, নতুন কোচ, নতুন সতীর্থ
ও নতুন খেলার ধরন; সবকিছু মিলিয়েই মেসিকে ঠিক আগের 'মেসি' হতে দিচ্ছে না। তবে এর বাইরেও
আরও অনেক কারণ আছে। যাই হোক, এখনই বিশ্বসেরা ফরোয়ার্ডকে 'বাতিলের' খাতায় ফেলা হবে চরম
বোকামি। পিএসজিতে পরের মৌসুমেই হয়তো মানিয়ে নেওয়ার কাজটা ভালোভাবেই সমাধা করবেন তিনি।
এরপর বাকি সমস্যা কাটিয়ে হয়তো আরও একবার দেখা দেবেন পুরনো রূপে।
সিটি/ স্পোর্টস / আরএ 
 
                          
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                






