প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে ২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ অভাবনীয় স্বর্ণালী এক অধ্যায় পার করছে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ পরিণত হয়েছে শান্তি, প্রগতি আর সম্প্রীতির এক মিলনমেলায়। একের পর এক রচিত হচ্ছে উন্নয়নের সাফল্যগাথা। বাংলাদেশ আজ বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্য অনুকরণীয় উন্নয়ন স্বপ্নদ্রষ্টা। তার নেতৃত্বে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ।
অর্থমন্ত্রী বৃহস্পতিবার (৯ জুন) জাতীয় সংসদে ২০১২-২৩
অর্থবছরের ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার এ বাজেট প্রস্তাব করেন। এ বাজেট
প্রস্তাবের শুরুতে এসব কথা বলেন তিনি।
বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রীর তুলে ধরা গেলো ১৩ বছরের
হাজারো অর্জনের উল্লেখযোগ্যগুলো হলো- জাতীয় সংসদ পরিণত হয়েছে রাষ্ট্রীয় সব
কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দুতে। গত ১৩ বছরে জিডিপির গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ৬
শতাংশ, যা ২০১৬-২০১৭, ২০১৭-২০১৮ ও ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ৭ শতাংশের ওপরে ছিল এবং
২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ৮ শতাংশ অতিক্রম করে।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতেও ২০২০-২০২১ অর্থবছরে জিডিপি
প্রবৃদ্ধি ঈর্ষণীয় ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ ছিল। ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা মেয়াদে
অর্জিত গড় প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ৩ শতাংশ এবং সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা
মেয়াদে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৬ শতাংশ। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা
(২০২১-২০২৫), প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০২১-২০৪১) এবং বদ্বীপ পরিকল্পনা
২১০০ প্রণয়নকরত বাস্তবায়ন কার্যক্রম গ্রহণ।
অর্থমন্ত্রী বলেন, জিডিপির আকার ৪ লাখ ৮২ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা থেকে ৩৯ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। মাথাপিছু আয় ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরে ৫৪৩ মার্কিন ডলার হতে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলার। মূল্যস্ফীতি ৫-৬ শতাংশের মধ্যে সীমিত আছে। দরিদ্র্যের হার ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ হতে কমে ২০ দশমিক ৫ শতাংশ এবং অতি দরিদ্রের হার দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৫ শতাংশ। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছুঁয়েছে ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (২০২১ সালের ২৩ আগস্ট)। বাজেটের আকার ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরের তুলনায় ১১ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন,
সামাজিক নিরাপত্তা খাতের বরাদ্দ দুই
হাজার ৫০৫ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকা হয়েছে। বিদ্যুৎ
উৎপাদন সক্ষমতা ৪,৯০০ মেগাওয়াট থেকে ২৫,৫৬৬ মেগাওয়াটে বৃদ্ধি পেয়েছে। ‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ,
ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ কর্মসূচির আওতায় আজ বাংলাদেশের
শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে।
তিনি বলেন,
মিয়ানমার ও ভারতের সমুদ্রসীমা নিয়ে
আইনি বিরোধের চূড়ান্ত নিষ্পত্তির মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের এলাকাভুক্ত
সমুদ্রের অংশ, এক্সক্লুসিভ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও মহীসোপানসহ মোট এক লাখ
১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার এলাকার ওপর স্বত্ত্বাধিকার লাভ করে। সমুদ্রের নীল
জলরাশি ও তার সম্পদ আহরণে এ উন্মুক্ত অধিকারের সুযোগ কাজে লাগাতে প্রেক্ষিত
পরিকল্পনা ২০৪১-এ সুনীল অর্থনীতির কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। নিম্নআয়ের দেশ থেকে
গ্রাজুয়েশন, স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা হতে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের
চূড়ান্ত ধাপ অতিক্রম করেছে বাংলাদেশ।
ব্রিটেনের অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনমিক
অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চের (সিইবিআর) উদ্বৃতি দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক
বিকাশ অব্যাহত থাকলে ২০৩৫ সাল নাগাদ বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে বাংলাদেশ।
উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে আজ বিশ্বের বিস্ময় বাংলাদেশ। বিশ্ব নেতৃবৃন্দের মুখে আজ
বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা। সম্ভাবনার এ স্বর্ণদুয়ার উন্মোচনে আওয়ামী লীগ ও শেখ
হাসিনা হয়ে ওঠেন অতীতের ঐতিহ্য সুরক্ষা,
বর্তমানের সফল পথচলা এবং ভবিষ্যতে
সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার অকুতোভয় ও বিশ্বস্ত কাণ্ডারি। আমরা দেশবাসী, জাতির
পিতা বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি বিনম্র কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।