বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশগুলোর তালিকায় শীর্ষ ১০০ এর মধ্যেও নেই বাংলাদেশ। সম্প্রতি প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট ২০২৩’ অনুযায়ী সুখী দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৭ দেশের মধ্যে ১১৮। ২০২২ সালের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৯৪।
প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে নেপালের অবস্থান ৭৮, পাকিস্তানের ১০৮, ভারতের ১২৬ ও শ্রীলঙ্কার অবস্থান ১১২। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে সিঙ্গাপুর। তালিকায় দেশটির অবস্থান ২৫।
এছাড়া তালিকায় শীর্ষ ১০০ এর মধ্যে থাকা এশিয়ার অন্য দেশগুলো হলো সংযুক্ত আরব আমিরাত (২৬), তাইওয়ান (২৭), সৌদি আরব (৩০), বাহরাইন (৪২), জাপান (৪৭), মালয়েশিয়া (৫৫), দক্ষিণ কোরিয়া (৫৭), থাইল্যান্ড (৬০), মালদ্বীপ (৬৩), চীন (৬৪) ও ফিলিপাইন (৭৬)।
তালিকায় সবচেয়ে নিচে রয়েছে আফগানিস্তান অর্থাৎ, সুখী দেশের তালিকায় দেশটির অবস্থান ১৩৭। এর এক ধাপ ওপরে রয়েছে লেবানন (১৩৬)। এবারের জরিপে প্রায় প্রতিটি সূচকেই সবচেয়ে সুখী ১০ দেশের চেয়ে ৫ পয়েন্ট করে কম পেয়েছে (শূন্য থেকে ১০ নম্বরের মধ্যে) তালিকার নিচের দিকে থাকা দেশগুলো।
এদিকে, বিশ্বের সবচেয়ে সুখী তালিকায় টানা ৬ বছর ধরে শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে ফিনল্যান্ড। ফিনল্যান্ডের প্রতিবেশী দেশ ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড, সুইডেন ও নরওয়েও এ তালিকার শীর্ষ ১০ এ রয়েছে। শীর্ষ ১০ দেশ হলো যথাক্রমে ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড, ইসরায়েল, নেদারল্যান্ডস, সুইডেন, নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড, লুক্সেমবার্গ ও নিউজিল্যান্ড।
তালিকার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য দেশের মধ্যে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া (১২), কানাডা (১৩), আয়ারল্যান্ড (১৪), যুক্তরাষ্ট্র (১৫) ও যুক্তরাজ্য (১৯)। এবারই প্রথম শীর্ষ ২০ এ উঠে এসেছে লিথুয়ানিয়া। তবে ২০ থেকে সরে ২১ নম্বরে নেমে গেছে ফ্রান্স।
অন্যদিকে, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে দু’পক্ষের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হলেও, দেশ দু’টি এখনো শীর্ষ ১০০ দেশের তালিকায় রয়েছে। এখানে রাশিয়ার অবস্থান ৭০ ও ইউক্রেনের ৯২।
জানা যায়, এ প্রতিবেদনে সবচেয়ে সুখী দেশ নির্ধারণের জন্য ছয়টি সূচক যাচাই করা হয়। সেগুলো হলো মাথাপিছু মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি), সামাজিক সহায়তা, সুস্থ জীবনযাপনের প্রত্যাশা, জীবনযাপনের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা, বদান্যতা, দুর্নীতি নিয়ে মনোভাব ও ডিসটোপিয়া।
ডিসটোপিয়া হলো একটি কাল্পনিক দেশ, যেখানে পৃথিবীর সবচেয়ে অসুখী লোকজন বসবাস করেন। অর্থাৎ, এ ছয় সূচকে ডিসটোপিয়ার চেয়ে কোনো দেশ খারাপ অবস্থায় থাকতে পারে না। এটিকে মূলত সূখী দেশের বিচারের মানদণ্ড হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ, অন্য দেশগুলো ডিসটোপিয়ার তুলনায় কতটুকু ভালো, তার হিসাব করে সূচক থেকে প্রাপ্ত পয়েন্ট গণনা করা হয়।
এবারের প্রতিবেদনের অন্যতম উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো—'বদান্যতা' সূচকের উন্নতি। সার্বিকভাবে করোনাভাইরাস পূর্ব পরিস্থিতির চেয়ে বদান্যতা ২৫ শতাংশ বেড়েছে। এ প্রতিবেদনের অন্যতম লেখক জন হেলিওয়েল মন্তব্য করেন, ২০২১ সালে অন্যদের প্রতি বদান্যতা দেখানোর সূচকে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন দেখা গিয়েছিল, যা ২০২২ সালেও একই রকম ছিল।
জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন সমাধান নেটওয়ার্ক প্রতি বছর এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে। বিশ্বের ১৫০টিরও বেশি দেশে সমীক্ষা চালিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। অংশগ্রহণকারী মানুষদের আগের তিন বছর (এবারের প্রতিবেদনের ক্ষেত্রে ২০২০-২০২২) তাদের জীবন কেমন কেটেছে, তা মূল্যায়ন করতে বলা হয়। --সূত্র: ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট