English

চুকনগর জেনোসাইডের ওপর প্রাথমিক গবেষণা কার্যক্রম শুরু

চুকনগর জেনোসাইডের ওপর প্রাথমিক গবেষণা কার্যক্রম শুরু
সারাদেশ খুলনা

“রিসার্চ অ্যান্ড ডকুমেন্টেশন অন চুকনগর জেনোসাইড অফ ১৯৭১” শীর্ষক এক গবেষণা কার্যক্রম শুক্রবার (৫ মে) জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগরে শুরু হয়েছে।

আগামী ২০ মে চুকনগর জেনোসাইড দিবসকে সামনে রেখে চুকনগর কলেজ এর গণহত্যা মিলনায়তনে এ উপলক্ষে দুদিনব্যাপি এক প্রশিক্ষণ কর্মশালা আয়োজন করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধের সংগঠন আমরা একাত্তর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ (সিজিএস) এ গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সেন্টার ফর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট এ্যাসিসটেন্স (সিসিডিএ) -এর সহযোগিতায় চুকনগর গণহত্যা ‘৭১ স্মৃতিরক্ষা পরিষদ, সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা উত্তরণ এবং উলসির সহায়তায় এ প্রশিক্ষণ আয়োজন করা হয়।

প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধক আমরা একাত্তরের প্রধান সমন্বয়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা হিলাল ফয়েজী বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর পরিচালিত জেনোসাইডের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় করতে হলে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে আইনসঙ্গত, ন্যায়সঙ্গত, যুক্তিসম্মত প্রমাণক উপস্থাপন করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন যথাযথ গবেষণা ও ডকুমেন্টেশন। এ উদ্দেশ্যেই আমরা একাত্তর পর্যায়ক্রমে সারাদেশে সংঘটিত জেনোসাইডের ওপর গবেষণা পরিচালনা করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক সমন্বিত উদ্যোগ ও পরিকল্পনা প্রয়োজন । এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে আমরা একাত্তর দেশ-বিদেশে বাংলাদেশ জেনোসাইডের বিষয়ে জনমত গড়ে তুলতে কাজ করছে

সভাপতির বক্তব্যে  চুকনগর গণহত্যা ‘৭১ স্মৃতিরক্ষা পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ এ বি এম শফিকুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে সংঘটিত জেনোসাইডের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মুক্তিযুদ্ধের এ অসমাপ্ত কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে এ সম্পর্কে তরুণ প্রজন্মকে সচেতন করতে হবে।

বাংলাদেশ জেনোসাইডের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের আন্দোলনে তরুণদের  অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

আমরা একাত্তরের কেন্দ্রীয় সংগঠক ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) এর বিশেষ প্রতিনিধি মাহফুজা জেসমিন এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন, চুকনগর কলেজের অধ্যক্ষ মনিরুল ইসলাম ব্রাউন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী গবেষক সালমা সোনিয়া, বটিয়াঘাটা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই গাইন, বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম মহিউদ্দিন, সিসিডিএ-এর উপ-নির্বাহী পরিচালক মোঃ লুৎফর রহমান এবং আমরা একাত্তরের তরুণ সংগঠক অনুপম জামান বর্ণ।

দুই দিনব্যাপী এই প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রভাষক, সাংবাদিক ও কলেজ শিক্ষার্থীসহ ১৪ জন অংশ নেন। তারাই মাঠ পর্যায়ে এ গবেষণার প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করবেন।

উল্লেখ্য ১৯৭১ সালের ২০ মে চুকনগরে বিশ্বের অন্যতম নৃশংস জেনোসাইড সংঘটিত হয়। বাংলাদেশের আটটি চিহ্নিত জেনোসাইড কেন্দ্রের মধ্যে কেবল চুকনগরেই চার থেকে পাঁচ ঘন্টার ব্যবধানে দশ থেকে চৌদ্দ হাজার লোককে হ্ত্যা করা হয়। সেদিন বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের বরিশাল, পিরোজপুর, বাগেরহাট, খুলনাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের হাজার হাজার সাধারণ মানুষ ভারতের শরণার্থী শিবিরে  যাওয়ার পথে চুকনগর ভদ্রা নদীর পারে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। ২০ মে সকালে তারা দীর্ঘ যাত্রার প্রস্তুতি হিসেবে খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করছিলেন। সকাল ১১.০০টার দিকে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর অতর্কিত হামলায় নিহত হন নারী-শিশু-বৃদ্ধসহ প্রায় বারো হাজার মানুষ।