জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
সাত মাস ধরে শতকরা ১০ শতাংশ কমিশনে ট্রাক চালান রাজু। ট্রাকটির ট্যাক্স টোকেন ও ফিটনেস সার্টিফিকেট মেয়াদোত্তীর্ণ। ধারণক্ষমতা ৭ টন হলেও দুর্ঘটনার সময় ট্রাকের ওজন ছিল ১৩.৫ টন। যানবাহন চালানোর জন্য হালকা বা ভারী কোনো লাইসেন্স ছিল না চালক রাজুর।ময়মনসিংহের ত্রিশালে বাবা-মাসহ এক সন্তানের নির্মম মৃত্যুর ঘটনায় ট্রাকচালক রাজু আহমেদ ওরফে সিপনকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে র্যাব।
মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে ব্রিফ করেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, গত ১৬ জুলাই দুপুরে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার রায়মনি গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও এক কন্যাকে নিয়ে রাস্তা পারাপারের জন্য মহাসড়কের পাশে অবস্থান করছিলেন। এসময় ময়মনসিংহগামী একটি ট্রাক বেপরোয়া গতিতে এসে তাদের চাপা দেয়।
দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন জাহাঙ্গীর আলম (৩৫) ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রত্মা বেগম (২৬)। তাদের তিন বছর বয়সী কন্যা সন্তান সানজিদা আক্তারকে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে মৃত্যুবরণ করে। দুর্ঘটনার সময় অন্তঃসত্ত্বা রত্না বেগমের উপর দিয়ে ট্রাক চলে যাওয়ার পর তার গর্ভে থাকা কন্যা সন্তান অলৌকিকভাবে ভূমিষ্ঠ হয়। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, নিহত জাহাঙ্গীর আলম পেশায় নির্মাণ শ্রমিক ছিলেন। দুর্ঘটনায় নিহত কন্যা ছাড়াও তাদের পরিবারে ৮ ও ১০ বছর বয়সী দুই ছেলে-মেয়ে আছে। দুর্ঘটনায় ভূমিষ্ঠ শিশুর ডান হাতের কনুইয়ের উপরের হাড়ে ফ্র্যাকচার ও কলার বোন ভেঙ্গে গেছে বলে জানা গেছে।
এ ঘটনায় নিহত জাহাঙ্গীর আলমের বাবা বাদী হয়ে ১৭ জুলাই
ময়মনসিংহের ত্রিশাল থানায় সড়ক পরিবহন আইনের ৯৮/১০৫ ধারায় একটি মামলা করেন। মামলা
নং ১৮।কমান্ডার মঈন বলেন, মামলার পর দুর্ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে
গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে র্যাব। র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১৪
অভিযান চালিয়ে সোমবার রাতে ঢাকার সাভার এলাকা থেকে ঘাতক ট্রাকচালক মো. রাজু আহমেদ
ওরফে সিপনকে (৪২) গ্রেপ্তার করে। রাজু রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আব্দুর রাজ্জাকের
ছেলে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রাজু নিহতদের গাড়ি চাপা দেওয়ার সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, চালক রাজু গত ১১ জুলাই থেকে একটানা ট্রাক চালিয়ে আসছিলেন। ১৫ জুলাই চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট থেকে আম বোঝাই করে এবং পরে রাজশাহীর নৌহাটা থেকে আলু বোঝাই করে কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে যাচ্ছিলেন। রাত ১২টায় ট্রাক নিয়ে রওনা হন তিনি। পথে হালকা বিরতি নিয়ে দুর্ঘটনার আগ পর্যন্ত একটানা গাড়ি চালিয়ে আসছিলেন। ময়মনসিংহের ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ডের কাছে পৌঁছালে রাস্তা পারাপারের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী-সন্তানকে চাপা দেন তিনি।
দুর্ঘটনার পর উপস্থিত লোকজন ট্রাকটি থামায়। তখন সুযোগ বুঝে রাজু ঢাকাগামী একটি বাসে উঠে পড়েন। পরে বাস থেকে ময়মনসিংহ বাইপাসে নামেন এবং সেখান থেকে একটি সিএনজি অটোরিকশায় করে প্রথমে মুক্তাগাছা এবং পরে আরেকটি বাসে করে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা যান। সেখান থেকে তার পরিচিত বিভিন্ন ট্রাক চালকের ট্রাকে উঠে আত্মগোপনে থাকেন। সোমবার এমন একটি ট্রাক সাভারে পৌঁছালে সেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
চালক রাজু প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানান, ৬/৭ মাস আগে থেকে শতকরা ১০ শতাংশ কমিশনে ট্রাকটি চালাচ্ছেন তিনি। গাড়িটিতে সবসময় কাঁচামাল পরিবহন করা হতো। গাড়ির বর্তমানে ট্যাক্স টোকেন এবং ফিটনেস সার্টিফিকেটের মেয়াদ শেষ। ধারণক্ষমতা ৭ টন হলেও দুর্ঘটনার সময় গাড়িটির ওজন ছিল ১৩.৫ টন।ভারী যানবাহন চালানোর জন্য বৈধ লাইসেন্স নেই রাজুর। আগে মাঝারি ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল, যা ২০১৬ সালে হারিয়ে ফেলেন তিনি।
চালক রাজু ২০০২ সালে যশোরের এক ট্রাক ড্রাইভারের হেলপার
হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিলেন। সে সময় বাম পা মারাত্মকভাবে
জখম হওয়ায় ছয় বছর গাড়ি চালাননি তিনি। গত ১০ বছর ধরে নিয়মিত বিরতিতে ট্রাক চালান
তিনি। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে
জানান খন্দকার মইন।
সিটি/আরএ/১৯ জুলাই,২০২২