এস.এম আকাশ, ফরিদপুর প্রতিনিধি:
ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার মাঝকান্দী এলাকা থেকে ২য় শ্রেণী পড়ুয়া ইভা নামের ৭বছরের সেই শিশুর ধর্ষণের অভিযোগটি সম্পূর্ন মিথ্যা প্রমাণিত করেছে পুলিশ। পুলিশ শিশুটির বক্তব্য এবং ঘটনাটি শুনে তাত্ক্ষণিক বুঝতে পারে যে এটা একটি সাজানো ও পরিকল্পিত নাটক।
এঘটনায় পুলিশ আটককৃত শিশুটির নিরাপরাধ ভাইসহ তার বাবাকে সম্মানের সাথে ছেড়ে দিয়েছেন। রবিবার (২৬মার্চ) ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো: শাহজাহান (পিপিএম সেবা) এই তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, ওই দিনই আমি শিশুটির বক্তব্য শুনে বুঝতে পারি যে এটা একটি পরিকল্পিত সাজানো নাটক। ওই স্কুলের সহকারী শিক্ষকা লিপি এই ঘটনার মুল পরিকল্পনাকারী, তিনিই শিশুটিকে তার বাবার বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলতে বাধ্য করেছেন। আমি ওই দিনই নিরাপরাধ শিশুটির বাবা ও ভাইকে ছেড়ে দিয়ে পরে ১৯ তারিখে মুল অপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলা নিয়ে তাদেরকে আটক করেছি, আদালত তাদের জামিন দিলে আমারতো কিছু বলার নেই। এই ঘটনার পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আড়–য়াকান্দী স্কুলের ক্লাস রুমের মধ্যে শিশুটির নিরাপরাধ ভাই ও তার বাবাকে নরপশুরমত পেটানোর একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এই ভিডিও দেখে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সুষ্টি হয়েছে।
এঘটনায় শিশুটির বাবা ইয়ামিন মৃধা ওরফে রাজু জানান, আড়–য়াকান্দী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা লিপি ম্যাডামের কোন সন্তান না থাকায় লিপি মাঝে মধ্যেই আমার মেয়েকে স্কুল থেকে তার বাসায় নিয়ে যায়। আমি আমার মেয়েকে ফেরত চাইলে তিনি আমার সাথে খারাপ আচারণ করেন। ইয়ামিন মৃধা আরও বলেন, আমাকে গরীব অসহায় ভেবে দেশ ও সমাজের কাছে আমাকে খারাপ মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে আমার মেয়েকে তার জিম্মায় রাখার একাট নাটক সাজিয়েছিলো, কিন্তু একজন ফেরেস্তার মত পুলিশ সুপার স্যার এর কারনে তার এই যড়যন্ত্র সফল হয়নি। তিনি এই জঘন্য অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (১৭ মার্চ) দুপুরে আড়ুয়াকান্দী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পুলিশ ও সাংবাদিকদের ফোন করে জানানো হয় যে, দুই ধর্ষণকারীকে আটক করে ওই স্কুলের রুমের মধ্যে রেখেছে স্থানীরা। ওই সংবাদ পেয়ে পুলিশ ও সাংবাদিক ঘটনাস্থলে গেলে উপস্থিত সকলেই জানান, শিশুটি আড়ুয়াকান্দী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২য় শ্রেণীর ছাত্রী। তার মা নেই, সে তার বাবার সাথে মাঝকান্দী গ্রামে একটি ভাড়ার বাসায় থাকেন। বাবা সপ্তাহে ৫দিন কাজের জন্য বাসার বাহিরে থাকেন। এই সুযোগে শিশুটির সৎ ভাই জোরপূর্বক তার সাথে অসামাজিক কাজ করেন।
শিশুটির বাবা সপ্তাহে দুই দিন বাসায় আসেন এবং শিশুটির সাথে অসামাজিক কাজ করে চলে যান। তারা আরও বলেন, প্রতিদিন রাত ১২ টার পরে শিশুটির ঘর থেকে তার কান্নার আওয়াজ শোনাযায়। এই বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয়রা সবাই মিলে সুকৌশলে শিশুটির বাবা ও সৎ ভাইকে সংবাদ দিয়ে এনে আড়–য়াকান্দী স্কুলঘরে আটকিয়ে রেখে তারা পুলিশকে ফোন করেন। তাদের এই মিথ্যা সাজানো কথা বিশ্বাস করে পুলিশ অভিযুক্ত ওই দইুজন বাবা ও ছেলেকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরবর্তিতে পুলিশের কাছে বিষয়টি সন্দেহ হলে পুলিশ আটককৃতদের সরাসরি পুলিশ সুপারের কাছে নেন, তারা দুজন নিরাপরাধ বুঝতে পেরে পুলিশ সুপার সাথে সাথেই তাদের ছেড়ে দেন। সেই সাথে শিশুটির ভাইকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করেন।
ওই নিরাপরাধ দুজন হলেন, মধুখালী উপজেলার কামারখালী ইউনিয়নের সালামতপুর গ্রামের ইয়ামিন মৃধা(৪০) ও তার ছেলে রাজন মৃধা(১৩)।