English

ইন্দোনেশিয়ায় ফুটবল স্টেডিয়ামে দাঙ্গা, পদদলিত হয়ে নিহত ১২৯

ইন্দোনেশিয়ায় ফুটবল স্টেডিয়ামে দাঙ্গা, পদদলিত হয়ে নিহত ১২৯
আন্তর্জাতিক

ফুটবলের ইতিহাসে হৃদয়বিদারক এক ঘটনার সাক্ষী হল ইন্দোনেশিয়ার কানজুরুজান স্টেডিয়াম; পূর্ব জাভার মালাং অঞ্চলের ওই মাঠে ম্যাচ শেষে দাঙ্গায় আর পদদলিত হয়ে মৃত্যৃ হল অন্তত ১২৯ জনের।

রয়টার্স জানায়, শনিবার রাতে আরেমা এফসি ও পারসেবায়া সুরায়া ক্লাবের ম্যাচ শেষে এ ঘটনায় আরও অন্তত ১৮০ জন আহত হয়েছেন।

ইন্দোনেশিয়ার লিগা ওয়ানের ম্যাচটি ৩-২ গোলে জেতে পারসেবায়া। দুই দশকের বেশি সময় পর পারসেবায়ার কাছে হারায় আরেমার সমর্থকেরা ক্ষুব্ধ হয়ে মাঠে ঢুকে পড়েন।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবর, আরেমার অন্তত ৩ হাজার সমর্থক ম্যাচের পর মাঠে ঢুকে পড়ে। পূর্ব জাভার পুলিশ প্রধান নিকো আফিন্তা সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, সমর্থকরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে থাকলে এক পর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস ছোড়ে।



তাতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং হুড়োহুড়ি শুরু হয়। চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যে পদদলিত এবং শ্বাসরুদ্ধ হয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটে।

আফিন্তা জানান, ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ৩৪ জনের; বাকিরা মারা যান হাসপাতালে। মৃতদের মধ্যে দুজন পুলিশ কর্মকর্তাও আছেন।

পুলিশ প্রধানের দাবি, বাধ্য হয়েই তারা কাঁদুনে গ্যাস ছুড়েছিলেন। তার ভাষায়, “পুরো অরাজক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। তারা পুলিশ কর্মকর্তাদের আক্রমণ করেছিল, গাড়ি ভাঙতে শুরু করেছিল।”

স্থানীয় টিভি স্টেশনগুলোর ভিডিওতে দেখা যায়, দর্শকরা বানের জলের মত মাঠে প্রবেশ করছে এবং ধস্তাধস্তি হচ্ছে। সংজ্ঞা হারানো দর্শকদের বয়ে নিতেও দেখা যায় অন্যদের।

বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্তা সংস্থা ফিফার নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী, মাঠে নিরাপত্তাকর্মীরা কখনোই আগ্নেয়াস্ত্র কিংবা ‘দর্শক নিয়ন্ত্রণে গ্যাস’ ব্যবহার করতে পারেন না। পূর্ব জাভার পুলিশ আইনটির কথা জানত কিনা, সেই প্রশ্নের তাৎক্ষণিক কোনো জবাব পায়নি রয়টার্স।

ইন্দোনেশিয়ার মানবাধিকার কমিশনার রয়টার্সকে বলেছেন, কাঁদুনে গ্যাস ছোড়ার ঘটনাসহ মাঠের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।

দেশটির নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী মোহাম্মদ মাহফুদ মাহমোদিনের দাবি, ৩৮ হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতার ওই স্টেডিয়ামে শনিবারের ম্যাচের জন্য টিকিট বিক্রি হয়েছিল ৪২ হাজার।

ইন্দোনেশিয়ায় ফুটবল মাঠে দাঙ্গা ও সংঘর্ষের ঘটনা নতুন নয়। ফুটবল ক্লাবগুলোর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা তুমুল, যা সমর্থকদেরও আগ্রাসী করে তোলে অনেক সময়।

দেশের ক্রীড়ামন্ত্রী জয়নুদিন আমালি জানান, তারা ফুটবল মাঠে নিরাপত্তার বিষয়টি আবার খতিয়ে দেখবেন এবং প্রয়োজনে দর্শকবিহীন মাঠে খেলা চালানোর বিষয়টিও বিবেচনায় নেওয়া হবে।

এ ঘটনার পর লিগা ওয়ানের খেলা এক সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেছে ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্দোনেশিয়া। তদন্ত শুরুর ঘোষণাও দিয়েছে তারা।

মাঠে গণ্ডগোলে হতাহতের অনেক ঘটনা আছে ফুটবল ইতিহাসে। গত জানুয়ারিতে ক্যামেরুনে এক মাঠে পদদলিত হয়ে মারা যান ৮ জন।

আর ২০১২ সালে মিশরে ভয়াবহ সংঘর্ষে ৭৩ জনের মৃত্যু এবং ১ হাজারের বেশি সমর্থকের আহত হওয়ার ঘটনায় সেখানে লিগ বন্ধ ছিল দুই বছর। ২০০১ সালে ঘানায় একটি মাঠে পদদলিত হয়ে মারা যায় ১২৬ জন।