জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও
সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন,
রাখঢাক করার কিছু নেই। উল্লেখ্যযোগ্য
হারে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার বাড়াতে হবে।
আমরা ইভিএমের পক্ষে এবং এটি জোরালো ও স্পষ্ট। মঙ্গলবার
(২৮ জুন) নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশন (ইসি) আয়োজিত বৈঠকে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা
বলেন।
এ দিন বিকেলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী
হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভা শুরু হয়। সভার শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য
দেন সিইসি। রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেওয়া শুরু হলে প্রথমেই আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি
দল বক্তব্য দেন।
এ সময় আসন্ন সংসদ নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার
উল্লেখযোগ্য হারে ব্যবহারের জন্য সিইসির প্রতি আহ্বান জানায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
এছাড়া জনপ্রিয় ও সহজে ব্যবহারের লক্ষ্যে এখন থেকেই ইভিএমের প্রচার-প্রচারণার
উদ্যোগ নিতে পরামর্শ দেয় দলটি।
এ নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামী
নির্বাচনে ইভিএমের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি করতে আমরা সিইসির কাছে আহ্বান
করছি। আমরা মনে করি, দেশে ইভিএম পদ্ধতি অধিকতর জনপ্রিয়। এটি সহজে ব্যবহার
করার লক্ষ্যে ইসি এখন থেকেই প্রচার-প্রচারণায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে ছয় আসনে ইভিএম ব্যবহার করে
তৎকালীন ইসি। ওই সময়ও আওয়ামী লীগ ইভিএমের পক্ষে অবস্থান নেয়। ইভিএমের পক্ষে
নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যায় কাদের বলেন,
আওয়ামী লীগ মনে করে, ইসির
কার্যক্রমে ইভিএমসহ প্রযুক্তি বৃদ্ধির কারণে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
ইভিএম ব্যবহারের ফলে ভোট ডাকাতি, কেন্দ্র দখল,
নির্বাচনে জালিয়াতি ও ভোট চুরি বন্ধ
হবে।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ মনে করে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য ইসির গ্রহণযোগ্যতা, নিরপেক্ষতা ও সক্ষমতা গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া ইসির দায়িত্বশীল নিরপেক্ষ আচরণ ও সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য ইভিএমে ভোটগ্রহণ জরুরি।বর্তমান সরকারের অধীনে নয়, বরং ইসির অধীনেই নির্বাচন হবে উল্লেখ করে সেতুমন্ত্রী বলেন, এ সময় নির্বাচন সম্পর্কিত সব ধরনের কর্তৃত্ব থাকবে স্বাধীন কমিশনের।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, নির্বাচনকালে
প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচন পরিচালনার জন্য আবশ্যকীয় সব সংস্থা ও
প্রতিষ্ঠান ইসির তত্ত্বাবধানে ন্যস্ত থাকবে। নির্বাচনকালীন সরকারের কর্মপরিধি
কেবলমাত্র আবশ্যকীয় দৈনন্দিন রুটিন কার্যাবলির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। বর্তমান সরকার
ইসির কোনো কাজে হস্তক্ষেপ করবে না।
‘একটা কথা কেউ কেউ বলে থাকে বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। বর্তমান সরকারের অধীনে কিন্তু নির্বাচন হচ্ছে না, নির্বাচন হবে ইসির অধীনে। ইসিকে স্বাধীন ও কর্তৃত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য বর্তমান সরকার ফ্যাসিলেটেড করবে, সম্পূর্ণ সহযোগিতা আমরা দেবো।’‘এ সময় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ যেসব বিষয় নির্বাচন রিলেটেড, সেগুলো ইসির অধীনেই থাকবে। এখানে সরকারের করণীয় কিছু নেই। সরকার (নির্বাচনে) কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করতে মোটেও আগ্রহী নয়।’
এ সময় বিতর্কিত কাউকে পর্যবেক্ষক হিসেবে নিয়োগ না দেওয়া এবং প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের রিটার্নিং কর্মকর্তা থেকে পোলিং এজেন্ট নিয়োগসহ একগুচ্ছ দাবির কথা জানান আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ এই নেতা।আজকের সভায় আমন্ত্রিত ১৩টি দলের মধ্যে ১০টি দলের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। অংশ নেওয়া দলগুলো হলো- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল-এমএল, গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি- ন্যাপ, বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট।
এ দিন গণফোরামের প্রতিনিধিরাও বৈঠকে অংশ নেন, যদিও তাদের আমন্ত্রণ ছিল ২১ জুন। কিন্তু সেদিন দলটি আসতে পারেনি।অন্যদিকে, আমন্ত্রণ পেয়েও বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল- বাসদ সভায় অংশ নেয়নি।
এর আগে, দুই ধাপে ২৬টি রাজনৈতিক দলকে সংলাপে আমন্ত্রণ জানায় ইসি। গত ১৯ ও ২১ জুন দুই ধাপে ২৬টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের ইভিএম যাচাইবিষয়ক সভা করে ইসি। এই দুই ধাপে ১৮টি দল উপস্থিত থাকলেও সাড়া দেয়নি বিএনপিসহ অন্য আটটি দল।